ভূমির অবক্ষয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী

ঊর্বর ভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই ভবিষ্যত গড়তে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূমির অবক্ষয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি জানান, ইউএন কনভেনসন টু কমবেট ডেজার্টিফইকেশন এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ‘অবক্ষয়িত ভূমিকে স্বাস্থ্যকর ভূমিতে রূপান্তর’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে ‘বিশ্ব মরুকরণ ও খরা দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান। সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব প্রফেসর ড. জহুরুল করিম, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ এর ডিন এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. অলোক কুমার পাল, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ অন্যরা।

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, সরকার মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধে পানির অপ্রাপ্যতা, বন উজাড়, ভূমিক্ষয় এবং পরিবেশের ওপর মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করছে।

মন্ত্রী এসময় ভূমির অবক্ষয় রোধে ইট ভাটায় সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ২০২৫ সালের পরে সরকারি কাজে মাটির তৈরি ইট ব্যবহার করা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, সরকার গত বছর সাড়ে আট কোটি গাছ রোপণ করেছে এবং এবছরও আট কোটি গাছ রোপণ করবে। যে কোনও প্রয়োজনে একটি গাছ কাটা হলে পাঁচটি গাছ লাগানোর নীতি বাস্তবায়ন করা হবে। এসকল উদ্যোগ ভূমির ক্ষয়রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, সরকার ভূমি অবক্ষয়, মরুকরণ এবং খরা মোকাবিলায় ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্রোগ্রাম ফর কমবেটিং ডেজার্টিফিকেশন ল্যান্ড ডিগ্রেশন অ্যান্ড ড্রট ২০১৬+২০২৪’ বাস্তবায়ন করছে। জাতিসংঘের এসডিজি ১৫ এর টার্গেট ১৫ দশমিক ৩ ভূমির অবক্ষয় নিরপেক্ষতা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ভূমি অবক্ষয় রোধে জাতীয় রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি মোকাবেলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় কার্যক্রম এবং খরা ও ভূমিক্ষয় রোধে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদী জমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য চলে যাচ্ছে। ভূমিক্ষয়, লবণাক্ততা, মাটির অম্লতাবৃদ্ধি, মাটির পুষ্টি উপাদান হ্রাস, ভারী ধাতু দূষণ ইত্যাদি বাংলাদেশে ভূমির অবক্ষয়ের কারণগুলির অন্যতম। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য, টেকসই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা ও পানির সহজলভ্যতা বাড়াতে সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক বিপযর্য় রোধে সকলের সম্মিলিত উদ্যেগ ও প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।