রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে

রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অং সান সু চিসহ অন্যান্য রাজনীতিকদের মুক্তির বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২২ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এই প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো।

তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুরা যারা মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, তারা সব সময় বলেন বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে খুব ভালো কাজ করেছে। তাদের দাবি, তারা বাংলাদেশের পক্ষে আছে। কার্যত তাদের ব্যবসা বাণিজ্য মিয়ানমারের সঙ্গে অনেক অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি যারা মানবাধিকারের বড় বড় কথা বলে, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ব্যবসা গত চার বছরে সাড়ে তিন গুণ থেকে ১৫ গুণ বেড়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে যে ৬০ ব্যাংক গত চার বছরে মিয়ানমারকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের গ্যারান্টি অ্যাসুরান্স দিয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপিয়ান ব্যাংক রয়েছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মুখে তারা বলে আমরা মিলিটারি জেনারেলকে আমাদের দেশে আসতে বারণ করেছি, কিন্তু ওই দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকই রেখেছে। আমরা এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডটা তুলে ধরেছি।’

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধনী দেশগুলোর উদ্দেশ্য প্রত্যাবাসন না, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমারে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসুক।  সু চি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক, সেটি তারা চায়। আমরা বলেছি অং সান সু চি ক্ষমতায় এলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরাও গণতন্ত্র চাই কিন্তু উনার (সু চি) গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য যে নমুনা আমরা দেখেছি, সেটি দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের বিবৃতিতে তিনটি জিনিস ছিল। প্রথমত বাংলাদেশ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং আমরা আইনসম্মতভাবে গণতান্ত্রিক পালাবদল চাই। দ্বিতীয়ত আমরা বলেছি আমরা সহিংসতা দেখতে চাই না। তিন নম্বর আমরা মিয়ানমারকে অনুরোধ করি তারা যেন তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে লোকগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’

মন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলো অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা করেছে।  জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন ঠিক করেছে। আমরা এখানে প্রস্তাব দিয়েছিলাম এবং তার বড় অংশটি ছিল প্রত্যাবাসন। কিন্তু তারা এটি গ্রহণ করেনি।  তারা যেহেতু আমাদের অগ্রাধিকার বিষয়টিকে গ্রহণ করেননি, সেজন্য আমরা এবস্টেইন করেছি এবং জোরালো বিবৃতি দিয়েছে। আমরা চাই তাদের টনক নড়ুক এবং তারা বুঝুক প্রত্যাবাসনটা আমাদের কাছে জরুরি।’