বাংলাদেশের ৫২টি জেলা করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকার তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ প্রতিবেদনে। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটিও বলছে, সারাদেশেই উচ্চসংক্রমণ এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় অতি উচ্চসংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে সরকার সারাদেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করতে গত ২২ জুন ঢাকার চারটি জেলাসহ পার্শ্ববর্তী সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছিল। তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে পুরোদেশে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। বন্ধ রয়েছে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস।
লকডাউনে সংক্রমণ কমবে, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে‑ এমনটা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু দেশে মহামারি শুরুর পর থেকেই শ্রমজীবী মানুষকে মাস্ক পরানোসহ স্বাস্থ্যবিধি মানানো যায়নি। এখনও সেটি না হলে কিছুদিনের জন্য ‘লাগাম টেনে ধরা’ সম্ভব হবে, দিনশেষে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
এদিকে দেশের মানুষ মাস্কের বিষয়ে উদাসীন ছিল শুরু থেকেই। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে গত আগস্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির সিদ্ধান্তও নিতে বাধ্য হয় সরকার। তাতেও শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরানো যায়নি। চলতি বছরের ৬ মে মাস্ক নিয়ে আট নির্দেশনা জারি হয়। সে কার্যক্রমও নেই এখন। বরং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মাস্ক ছাড়া মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি।
মহামারি বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শ্রমজীবীদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। লকডাউনের সময় খাবার দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
‘সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ ছাড়া শ্রমজীবীদের ঘরে রাখা যাবে না। ঘরে রাখা না গেলে সংক্রমণকে যে পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চাইছি, তা সম্ভব হবে না।’ বলেন ডা. মুশতাক।
নিম্ন আয়ের অথবা দিনমজুরদের বিষয়ে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটর সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যদি বিকল্প পদক্ষেপ নিতে সরকার ব্যর্থ হয়, তবে শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে বিধিনিষেধ মানবে না। ঘর থেকে বের হবেই।’
একই কথা বললেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা যেভাবে দিচ্ছে, সেভাবে মাস্ক সহায়তাও দিতে হবে। এটা বড় কিছু নয়। এটা না দিলে একজন থেকে পাঁচজন সংক্রমিত হবে।’
‘দেশে ৪০ হাজার পোশাক কারখানা আছে। প্রতিটি কারখানাকে সরকার নির্দেশ দিক ৫০০ করে মাস্ক বানাতে। তাহলে দুই কোটি মাস্ক একসঙ্গে আসবে।’ এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক আবু জামিল বলেন, ‘এবারের বাজেটে করোনা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে এক হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ আছে। সেখান থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে মাস্ক কেনা হোক। ২০ কোটি মাস্ক কিনে ফেলা হোক একবারে। এরপর এগুলো বিতরণ করতে থাকি। ভালো মাস্ক কিনে বস্তি এলাকায়, ভাসমান মানুষ ও শ্রমজীবীদের দিতে হবে। সংক্রমণের চেইনটা ভাঙতে মাস্কের বিকল্প নেই।’
‘রাস্তায় ধরে ধরে জরিমানা করে কিছু হবে না। সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ দরকার।’ জানালেন আবু জামিল ফয়সাল।