চলতি সপ্তাহেই বন্যার শঙ্কা

মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এবং উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। নদী অববাহিকার বহু এলাকা এখন আস্তে আস্তে প্লাবিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি দ্রুত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদী বন্যা শুরু হতে পারে। এটি দশ থেকে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে  বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এবং উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী দুই-চারদিনের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর,  গাইবান্ধা,  নীলফামারী, লালমনিরহাট—এই অঞ্চলগুলোতে বন্যার ঝুঁকি আছে। পরে এই বন্যা দেশের উত্তর  মধ্যাঞ্চল সিরাজগঞ্জ  ও বগুড়া হয়ে মধ্যাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ী,  ফরিদপুর,  শরীয়তপুর ও চাঁদপুর বন্যা কবলিত হবার শঙ্কা রয়েছে

তিনি বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী জুলাই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। এটি দেশের ভেতরে এবং উজানেও বেশি। সেক্ষেত্রে আমরা আশঙ্কা করছি মধ্যম মানের একটি বন্যা হতে পারে। চলতি মাসের মাঝামাঝি আবার বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে। তারপর বন্যার পানি কমে আসবে বলে আশা করছি। কাজেই এই বন্যা বড় ধরনের কিছু হবে না বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক বন্যার মতো হবে। এটি বিপদসীমার কিছুটা ওপরে উঠে তারপর আবার নেমে যাবে বলে আশা করছি আমরা।

আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, আসন্ন বন্যাটি দীর্ঘায়িত হবার আশঙ্কা নেই। এটি দশদিন থেকে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এরপর ক্রমান্বয়ে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বন্যার পানি নামতে শুরু করতে পারে। এই বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ- নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানির সমতল বাড়তে শুরু করেছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

কেন্দ্র থেকে আরও জানা যায়, আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চল,  উত্তর পূর্বাঞ্চল ও ভারতের হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয়সহ আশেপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।  এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীগুলোর পানির সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ডালিয়া স্টেশনে ১৪৭ মিলিমিটার।  এছাড়া  ঢাকা স্টেশনে ৭৪,  বরগুলা স্টেশনে ৮০ এবং কক্সবাজার স্টেশনে ৬৪  মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।  এছাড়া দেশের উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে চেরাপুঞ্জিতে ৬৬ মিলিমিটার এবং জলপাইগুড়িতে ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনের সংখ্যা হচ্ছে ১০১।  এরমধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৬০টি পয়েন্টের, কমেছে ৩৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১টি পয়েন্টের পানি।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র তাদের ১০ দিনের পূর্বাভাসে জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৯ জুলাই নাগাদ বাহাদুরাবাদ স্টেশনে যমুনা নদীর পানির সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানির সমতল ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। তবে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই। এদিকে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রমের শঙ্কা আপাতত নেই।

এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি হার্ড পয়েন্টেই (সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ) ১৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার ১.২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বীজতলা, সবজি বাগান, পাট ও তিলক্ষেত। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানায়,  মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে  উত্তর পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু  বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় আছে। এসবের প্রভাবে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম খুলনা,  বরিশাল  বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী,  ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী ভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।