প্রযুক্তি পণ্য ‘জরুরি সেবা’র আওতায় আসবে কবে?

টেলিকম সেবা, ইন্টারনেট, কলসেন্টার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস (আইটিইএস) খাতকে জরুরি সেবার আওতায় আনা হলেও হার্ডওয়্যার খাতকে আনা হয়নি। ফলে হার্ডওয়্যার খাতের পণ্য বিশেষ করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, একসেসরিজ, মোবাইলফোন চলমান লকডাউনে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রযুক্তি পণ্যের আউটলেট, মার্কেট, অফিস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা। এসব পণ্যের বিক্রি বন্ধ থাকায় শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীরাও।

লকডাউনে বন্ধ নেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন স্কুল। ব্যাংক ও শেয়ার বাজারও খোলা। হাসপাতালের কম্পিউটার সিস্টেম চালু রাখতে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা প্রয়োজন। এসবের জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি পণ্য। নতুন কিছু কিনতে হলে বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যটি মেরামত করার প্রয়োজন হলেও তা করা যাচ্ছে না। কারণ, প্রযুক্তি পণ্য সরকার ঘোষিত জরুরি সেবার আওতায় না পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা।

এজন্য আইসিটি খাতকে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ঘোষণা করে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। পুরো আইসিটি পরিবারকে জরুরি সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানিয়েছে বিসিএস।

এই লকডাউনে ব্যাংকের সার্ভার ‍রুমের কুলিং ফ্যান নষ্ট, হাসপাতালের আনইন্টারপর্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই ( ইউপিএস) বিকল, ইন্টারনেট সেবা দিতে আইএসপি প্রতিষ্ঠানের জন্য রাউটার ও সুইচের প্রয়োজন- এমন শতেক সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন ফোন পাচ্ছেন প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিসিএস সদস্যরা গ্রাহকদের জরুরি সেবা দিতে পারছেন না। এসব ঘটনা স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হলেও প্রযুক্তি খাতে সারাদেশের চিত্র মোটামুটি একই। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ উল মুনীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করপোরেট গ্রাহকরা আমাদেরকে ফোন করছেন কোনও ভেন্ডর সাপোর্ট দিতে পারবো কিনা বা পণ্যগুলো পৌঁছে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা জানতে চেয়ে।’ তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতের প্রতিটি সেবা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই শুধু টেলিকম ও ইন্টারনেটকে জরুরি সেবার আওতায় এনে পরিপূর্ণ আইটি সার্ভিস প্রদান প্রায় অসম্ভব।’

বেচাবিক্রি বন্ধ
লকডাউন চলায় বন্ধ প্রযুক্তি পণ্যের শো-রুম, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অফিস বা প্রধান কার্যালয় এবং মার্কেট বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রি একেবারে বন্ধ। প্রতিষ্ঠানগুলোর শো-রুমের ভাড়া, অফিস ভাড়া, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদও চলে এসেছে দুয়ারে প্রায়। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বোনাস দেওয়ারও একটা চাপ আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে একটা সপ্তাহ পেলে কোনো মতে কর্মীদের বেতনের একটা ব্যবস্থা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রযুক্তি পণ্যের একজন  ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যারা খুচরা বিক্রির পাশাপাশি করপোরেট সেল করি, বিভিন্ন সরকারি অফিসে পণ্য সরবরাহ করি, সেসব অফিস বন্ধ থাকায় অনেকেরই বিল আটকে গেছে।  সময় মতো বিল পাওয়া গেলেও টিকে থাকা যায় কোনও রকমে।  ঈদের আগে বিল পাওয়া এবং পেলেও চেক ভাঙানো যাবে কিনা, তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।  তার মনে আরেক সংশয় বাসা বেঁধেছে- ঈদের আগে আদৌ লকডাউন শিথিল হবে কিনা।  পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে করে তিনি কোনও আশা দেখেন না বলে জানান।

জানতে চাইলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিসের পরিচালক (চ্যানেল সেলস) মুজাহিদ আল-বেরুনী সুজন বলেন, ‘গত বছরের করোনাকালীন লকডাউনে ডিভাইস ও প্রযুক্তি পণ্যর সেবাদান কার্যক্রম চালু রাখতে পেরেছিলাম। এবারের লকডাউনে তা সম্ভব হয়নি। ফলে এই করোনাকালে জরুরি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তি ও সেবার প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যায়নি। অথচ প্রতিদিনই আমাদের কাছে সাপোর্টের জন্য ফোন আসছে।  প্রযুক্তি পণ্যের ফরমায়েশ আসছে- জরুরিভিত্তিতে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু উপায় নেই। পণ্য ও সেবা পৌঁছানোর জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটুকু ওপেন রাখা যায়, সেটা আমরা করতে রাজি আছি।’  তিনি জানান, বাজারে এখন অনেক পণ্যের সংকট আছে। এই সংকট সহজে যাবে না। কিন্তু যতটুকু পণ্য আসছে বা এসেছে, তাও গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকেও দেওয়া যাচ্ছে না।

স্মার্ট টেকনোলজিসের এই পরিচালক জানালেন, দেশের প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ২০ হাজার। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর সংখ্যা গড়ে ১০-১৫ জন। এদের বেতন-বোনাসের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়বেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল দেশের হাজারও পরিবার। তিনিও সরকারের কাছে প্রযুক্তি পণ্যকে জরুরি সেবা ঘোষণার দাবি জানান। 

লকডাউনের ফলে ফিজিক্যাল স্টোরগুলো বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের অন্যতম ভরসার জায়গা ছিল ই-কমার্স পোর্টালগুলো। সেখানে অর্ডার করার মতো অনেক পণ্য মিলছে না। স্টক শেষ হয়ে গেছে। অনেকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের আমদানিকারক বা পরিবেশকদের কাছে যোগযোগ করেও পণ্য পাচ্ছেন না। শো-রুম, বড় ওয়্যার হাউজ, ডিস্ট্রিবিউটরগুলোর ওয়্যারহাউজ বন্ধ থাকায় অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি পণ্যের সংকটে পড়েছে।