সড়ক-মহাসড়কে যানজট এড়াতে যত উদ্যোগ

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লকডাউন শিথিলের পর আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। একইসঙ্গে সড়ক-মহাসড়ক (হাইওয়ে) ও শহর এলাকায় যানজট নিরসনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। ফেরিঘাটগুলোতে যানজট এড়াতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে যানজট মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ বুধবার (১৪ জুলাই) বিকালে পুলিশ সদর দফতর থেকে এক ভার্চুয়াল সভায় মানুষের ঈদ উদযাপনকে নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশু পরিবহন, চামড়া পাচার রোধ, মলম পার্টি, জাল টাকার বিস্তার রোধ এবং ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতকে কেন্দ্র করে মহসড়কে সৃষ্ট যানজট নিরসনে গুরুত্ব দিতে সড়ক-মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং নৌপথে নৌ-পুলিশ‌কে যথাযথ দায়িত্ব পালনের নি‌র্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য বলা হয়েছে। সড়ক ও নৌপথে পশুবাহী ট্রাক বা লঞ্চে নির্দিষ্ট হাটের নাম উল্লেখ করে ব্যানার টানানো এবং এক হাটের পশুবাহী গাড়ি অন্য হাটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হাট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক, মহাসড়ক ও শহর এলাকায় যানজট নিরসনে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যানজটপ্রবণ স্থানগুলোতে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে যানজটের কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার যানজট কমাতে পুলিশকে সহায়তা ও দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকল জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী রাখা এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি ‘রেকার’ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের পরে দুই লেনের মধ্যবর্তী বঙ্গবন্ধু সেতু সংলগ্ন সড়কের সৃষ্ট যানজট নিরসনে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী বেইলি ব্রিজ নির্মাণের কথা বলা হলেও সেটা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও দাউদকান্দি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসনে টোলপ্লাজাগুলোতে অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে টোল পরিশোধের উদ্যোগ নিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। সেটাও এবারের ঈদে পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

আরিচা, দৌলতদিয়া, মাওয়া, বাংলাবাজারসহ সকল নৌ-ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপারে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে হাইওয়ে ও নৌ-পুলিশকে। মাওয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে অতিরিক্ত ফেরির ব্যবস্থা করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ-কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেসব ফেরি মেরামতযোগ্য সেগুলো দ্রুত মেরামত করে চালু করার ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে ফেরি ঘাটগুলো যাতে অচল হয়ে না পড়ে, সেজন্যেও প্রস্তুতি রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলকে। স্থানীয় পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পরস্পর সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পদক্ষেপ নেবে।

নৌ পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে যানজট নিরসনসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কেও র‌্যাব টহল দেবে। যানজট নিরসনে মুখ্য ভূমিকা র‌্যাব পালন না করলেও ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কাজ করবে র‌্যাব। বিশেষ করে যাত্রীবাহী যানবাহনে ইট বা পাথর ছুড়ে পথরোধ করে ডাকাতি বন্ধে জোর দেবে র‌্যাব।

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যানজট এড়াতে ফেরিঘাটগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও লঞ্চ চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ  এই বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখবে।’