সাতটি অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ পদক দেবে সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই এ পদক প্রবর্তন করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ পদক নীতিমালা-২০২১ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ পদক’ প্রদান করা হবে সেগুলো হলো—স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনে ভূমিকা; সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন; স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন; মুক্তিযুদ্ধ/স্বাধীনতা বিষয়ক সাহিত্য রচনা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র/তথ্যচিত্র/নাটক নির্মাণ/সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড; মুক্তিযুদ্ধ/স্বাধীনতা বিষয়ক গবেষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ।
এর বাইরে সরকার নির্ধারিত অন্য কোনও ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ পদক দেওয়ার কথা নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনও কাজ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে অথবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তৃতকরণ ও বিকাশে সহায়তা করেছে বা করছে, এমন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রতিবছর সাতটি পদক দেওয়া হবে। যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে পদক সংখ্যা কমবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।
পুরস্কারটি ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পর্যায়ে প্রদান করা হবে।
রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে/ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত বা দেউলিয়া কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ পদক প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হবেন না; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয় এমন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ পদক দেওয়া হবে না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক তুলে দেওয়া হবে।
পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা এবং নগদ দুই লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সরকারকে একটি পদক প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেবাশীষ নাগ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ পদক নীতিমালা-২০২১ গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও আমরা গেজেটটি হাতে পাইনি।’
পদকটি এ বছরই চালু হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীতিমালার চূড়ান্ত গেজেটের পর এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাহজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তারা সম্মানিত হতে পারেননি। বিশেষ করে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা অনেক ক্ষেত্রে সম্মানিত করতে পারিনি। সে কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একটি পদক প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিলাম। সরকার এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করে গেজেট প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছে। আমাদেরও তার একটি কপি দিয়েছে। নীতিমালায় কী আছে আমরা সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখবো।’
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক হচ্ছে স্বাধীনতা পদক। এছাড়া একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক, বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকসহ জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েক ধরনের পদক প্রদান করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নতুন করে কিছু পদক প্রবর্তন করেছে।
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পদকও প্রবর্তন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো এই পুরস্কার চালু করেছে।
‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ নামের পদক প্রতি দুই বছর অন্তর প্রদান করা হবে। এ পদকের অর্থমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।