উৎসবের আমেজ সচিবালয়ে

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ আর না বাড়ানোয় আজ বুধবার (১১ আগস্ট) খুলেছে সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস-আদালত। খুলেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। তবে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার কম হলেও বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। কর্মচাঞ্চল্যহীন সচিবালয়ে প্রথম কর্মদিবসে অনেকটাই ঈদের আমেজ বিরাজ করছে।

সচিবালয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা সচিবালয়ে এসেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সচিবালয়ের বারান্দা, সিঁড়ি, লিফট, সর্বত্রই চলছে শুভেচ্ছা বিনিময়। করোনার কারণে একে অপরকে দেখামাত্রই বুকে জড়িয়ে না ধরলেও হাসিমুখে কুশলাদি বিনিময় করেছেন ভেদাভেদ ভুলে।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে চলতি বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য আদেশ জারি করে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত খোলা রেখেই ১৯ দফা করনীয় পালনে নির্দেশ সম্বলিত জারি করা পরিপত্রে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে কঠোর বিধিনিষেধ দিতে বাধ্য হয় সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফায় দফায় এ বিধিনিষেধ কখনও রোজার ঈদ, আবার কখনও কোরবানির ঈদের কারণে শিথিল করা হয়েছে। আবার কখনও বাড়িয়ে দিতে দিতে তা চলতি আগস্টের ১০ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত এসে ঠেকে। অবশেষে ১১ আগস্ট (বুধবার) সকাল ৬টা থেকে বিনোদন কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, পর্যটন স্পট বন্ধ রেখে সব কিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এই সিদ্ধান্তের আলোকেই খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি দফতর। কাজকর্ম চালু হয়েছে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালয়ে। যদিও জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি ইউনিট খোলা ছিল। সেখানে কাজ করেছে সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ছিল তালাবন্ধ। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একে অপরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ বা যোগাযোগ হয়নি অনেক দিন। তাই দীর্ঘদিন পর অফিস খোলায় একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুশির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এবারের লকডাউন চলাকালে অনেকেরই দূর-দূরান্তে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি। কারণ আদেশ ছিল কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করার। তাই রাজধানীতে অবস্থান করলেও দেখা হয়নি তাদের মধ্যে। অনেকে মারাও গেছেন করোনায়। ফলে যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে অনেককেই শোকরিয়া আদায় করতেও দেখা গেছে। 

আজ (বুধবার) সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসের কাজে যোগ দিলেও আগামী সপ্তাহ থেকে বেশিরভাগই কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা।

সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা জানান, লকডাউন প্রত্যাহারের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশের মতো হতে পারে।

সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদফতর, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, এসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার কক্ষ খোলা হলেও বেশিরভাগ কক্ষেই কর্মকর্তা ছিলেন না। অনেক কক্ষে চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে রয়েছে। আবার যারা এসেছেন তাদের কাজে-কর্মেও অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব। উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মূলত পারস্পরিক খোঁজ-খবর ও শুভেচ্ছা বিনিময়েই ব্যস্ত রয়েছেন।

বুধবার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে লিফটগুলোর সামনে ভিড় ছিল না। সচিবালয়ে এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝের দর্শনার্থী কক্ষটিও ছিল ফাঁকা। সচিবালয়ের ভেতরে গাড়ি রাখার স্থানগুলো অন্যান্য সময়ের তুলনায় ফাঁকা ছিল।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারি অফিস-আদালত চালু হয়েছে। তবে পুরোদমে চালু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ করোনার কারণে আমরা গর্ভবতী নারী ও সিনিয়রদের অফিসে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছি। যারা আসছেন তারা সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করছেন। এ বিষয়ে আমাদের নির্দেশনাও রয়েছে।