'জন্মভূমির মতো আর কোথাও কি এত ভালো লাগে'

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৩ আগস্টের ঘটনা।)

নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি! গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি। অবারিত মাঠ, গগন ললাট, চুমে তব পদধূলি।

১৮ দিন বিদেশ সফরের পর স্বদেশের মাটিতে পা দিয়ে এই নিবিড় প্রাণের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিন বিকালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, নিজের জন্মভূমির মতো কি অন্য কোথাও এত ভালো লাগে?

এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন ‘আপনি তো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, এখন কেমন আছেন?’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভালো, বেশ ভালো।’

আরেকজন জানতে চান, ‘বিদেশ সফর কেমন লেগেছে?’ এর উত্তরেই প্রিয় নেতা কবিগুরুর ওই চরণ আবৃত্তি করেন। আবৃত্তি শেষে স্মিতহাস্যে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের পাল্টা বললেন, ‘বাকি চরণ আপনারা পূরণ করে নিন।’ এটি ছিল তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শুধু উপমহাদেশে নয়, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’ যুগোস্লাভিয়ায় ছয় দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফর ও কানাডায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদানের পর এদিন রাজধানী ফিরে বঙ্গবন্ধু এ কথা জানান।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আদৌ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্মানজনকভাবে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। আমরা গরিব হলেও কারও করুণা ভিক্ষা করি না।’

সম্মেলন সম্পর্কিত আরেক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, এ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে যোগ দেওয়া নেতারা উপমহাদেশের মানবিক সমস্যা সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।

২৬ জুলাই যুগোস্লাভিয়ার পথে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু। ৩১ জুলাই কমনওয়েলথে যোগ দিতে অটোয়া যান তিনি।

১৮ দিনের সফর শেষে স্বদেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে বলেন, কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমরা একে অপরকে জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।

image2 (40)দেশে ফিরে বাবার কাছে

তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অসুস্থ বাবাকে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু। পিতার শয্যার পাশে কিছু সময় কাটান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার পিতা শেখ লুৎফর রহমানকে দেখতে গেলে চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর মা, চার বোন ও আত্মীয়রা ছিলেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নানও এদিন বিকালে বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে যান।

স্মরণীয় সংবর্ধনা

বিদেশ সফরের পর এদিন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলে তাঁকে স্মরণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ৪টা ৫০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সমবেত জনতা জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ ধ্বনিতে মুখর করে তোলে।

মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা জানান। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো মুজিব কোট পরা বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে বেরিয়ে আসতেই উৎফুল্ল জনতা তুমুল করতালি দেয়। প্রিয় নেতা দুই হাত তুলে জনগণের প্রাণঢালা সংবর্ধনার জবাব দেন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পক্ষে তার সামরিক সচিব প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানান। এরপর বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। সুসজ্জিত সম্মিলিত বাহিনী প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। মঞ্চের পাশে উড্ডীন ছিল জাতীয় পতাকা।