বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ কতদূর?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি খন্দকার আব্দুর রশীদ ও রাশেদ চৌধুরীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আইনি জটিলতায় আটকে আছে বাকিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কাজ। তবে প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। এখন সম্পত্তি শনাক্তকরণের কাজ চলছে। শনাক্তকরণ শেষ হলেই তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পর্যায়ক্রমে বাজেয়াপ্ত হবে।

জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। তবে আইন পাসের আগেই পলাতক আসামিদের মধ্যে বরখাস্ত হওয়া লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ ও তার বাবা আব্দুল করিমের মালিকানাধীন ১৭ একর সম্পত্তি দুই দফায় বাজেয়াপ্ত হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে ১০ দশমিক ৮২ একর সম্পত্তি এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৫ সালের ১৪ জুন আরও ৬ দশমিক ১২ একর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়। সব মিলিয়ে রশিদ ও তার পরিবারের প্রায় ১৭ একর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার।

অপরদিকে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি বরখাস্ত হওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরীর ১ দশমিক ১৫ একর সম্পত্তি জব্দ করা হয়। এসব ভূমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তিতে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, যারা এখনও পালিয়ে আছে তাদের শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। কয়েকজন খুনির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজ চলছে।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আমাদের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। প্রক্রিয়া শেষেই বাজেয়াপ্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিচারের পথ খোলে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ফের থেমে যায় হত্যামামলার গতি। ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর আপিল বিভাগে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। মামলায় ১২ ঘাতককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে পলাতক আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। নূর চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন পলাতক রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর আরেক পলাতক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল।

আবদুল মাজেদ ২৫ বছর ভারতে পালিয়ে ছিল। করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মাজেদ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ল’ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ছবিসংবলিত তথ্য পাঠানো হয়েছে। যাতে খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।