ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা।)

ভারতের স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ও ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো অভিনন্দন বাণীতে রাষ্ট্রপতি সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় এ আশা প্রকাশ করেন যে, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সমঝোতা জোরদার হবে।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন এ ঐতিহাসিক দিবসে আমি বাংলাদেশের জনগণ সরকারের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে এবং উভয় দেশের জনগণ উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে। আপনার গতিশীল নেতৃত্বে ভারতীয় জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। এ উপলক্ষে আমি আপনার সুস্বাস্থ্য এবং ভারতীয় জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।

image2 (43)যুদ্ধবন্দী প্রশ্নে ফায়সালা দেরি হবার জন্য পাকিস্তান দায়ী

ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের যুক্ত ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন ভারত-পাকিস্তানের কর্মকর্তা পর্যায়ে পরবর্তী বৈঠক সফল হবে বলে তিনি আশা করছেন। আর যদি এ বৈঠক ব্যর্থ হয় তবে সারাবিশ্ব জানবে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কাজে কেন বিলম্ব হচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধী বক্তৃতায় নানা সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেন। উপমহাদেশের সমস্যা প্রসঙ্গে বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি এবং বলেন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপমহাদেশের সার্বিক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যার অবতারণা করে প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণকে আশ্বাস দেন যে, দ্রব্যমূল্য ঠিক করতে জিনিসপত্রের সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতির ঘটাবার জন্য কালোবাজারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

image0 (59)নির্দেশ গ্রহণের উদ্দেশ্য ঢাকায় হাকসার

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি পি এন হাকসার এদিন নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত পাকিস্তান দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা বৈঠকে ‘সতর্কতামূলক আশাব্যঞ্জক’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দিল্লি থেকে ঢাকা আসার পরে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন আসন্ন ভারত-পাকিস্তান আলোচনা সম্পর্কে আশাবাদী এই জন্য যে মূলত আমরা যেসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি তাতে সাফল্য লাভ করতে পারি। আর সর্তকতা এইজন্য যে মানুষের যেকোনও প্রচেষ্টায় কিছু অসুবিধা থাকে। দিল্লি থেকে হাকসারের সাথে ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের সচিব কেবল সিং, কে পি এস মেনন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার শ্রী দিক্ষিত ঢাকা আসেন। বিমানবন্দরে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এনায়েত করিম বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত সহ আরও অনেকে।

হাকসার বলেন বাংলাদেশ সরকারকে রাওয়ালপিন্ডি আলোচনায় বিস্তারিত বিবরণ ও প্রয়োজন হলে ব্যাখ্যা দানের জন্য তিনি ঢাকায় এসেছেন। দিল্লিতে আসন্ন ভারত-পাকিস্তান বৈঠক সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কামাল হোসেনের নির্দেশ পেতে তিনি এখানে এসেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দূত আরও বলেন রাওয়ালপিন্ডিতে ভারত-পাকিস্তান আলোচনা চলাকালে তার বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ সম্পর্কে অবহিত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ড. কামাল হোসেনকে বৈঠক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু স্বাভাবিক কারণে তা ছিল অসম্পূর্ণ। তিনি বলেন প্রথম পর্যায়ে আলোচনা শেষ করে নয়াদিল্লি ফিরে এসে প্রথমে বৈঠক সম্পর্কে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীকে রিপোর্ট প্রদান কর্তব্য বলে মনে করা হয়েছে। তেমনি ঢাকায় পৌঁছে তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের কাছে পেশ করবেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা

এদিন সকালে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাসসের খবরে বলা হয় আড়াই ঘন্টাব্যাপী মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ১৮ দিনব্যাপী বিদেশে প্রত্যাবর্তনের পর এটাই প্রথম মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক।