বেড়েই চলেছে পানি, ৮ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ উজানে বাড়ছে বৃষ্টি। এ বৃষ্টিতে বেড়ে যাচ্ছে নদনদীর পানি। ফলে নদী অববাহিকায় একের পর এক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে ধরলা, যমুনা, পদ্মা, আত্রাই, গড়াই নদীর আট স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়  দেশের কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ,  রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পাশাপাশি যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্ট এবং ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। এ কারণে দেশের অনেক নদী অববাহিকার অনেক এলাকায় বন্যার কবলিত হয়েছে।  ৫ নদীর অনেক স্টেশনের পানি এখন বিপৎসীমার ওপরে। আরও দুটির পয়েন্টের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে আরও বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদ- নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ,  রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্ট এবং ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। কমতে পারে গঙ্গা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীগুলোর পানি, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

কেন্দ্র জানায়, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে যমুনা নদীর মথুরা পয়েন্টের পানি গতকাল ছিল ৮ সেন্টিমিটার, আজ তা বেড়ে ১২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনার কাজিপুর পয়েন্টের পানি এখন ১ সেন্টিমিটার, আরিচা পয়েন্টের পানি ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি ৪২ থেকে বেড়ে আজ ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে এই নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নতুন করে আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টের পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে গড়াই নদীর কামারখালি পয়েন্টের পানি ২০ সেন্টিমিটার থেকে কিছুটা কমে এখন বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেট স্টেশনে ৮১ মিলিমিটার। এছাড়া  পঞ্চগড় স্টেশনে ৬৩, লালাখালে ৭৮, কানাইঘাটে ৭৪, ডালিয়ায় ৫১ এবং লামা স্টেশনে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া দেশের উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে পাসিঘাটে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু  বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে দুর্বল অবস্থায় আছে। এসবের প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের  কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরণের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।  

এদিকে নদী বন্দরগুলোর জন্য এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী,  বগুড়া,  বরিশাল, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলগুলোর উপর দিকে দক্ষিণ -দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী ভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য এসব এলাকার বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।