বাংলাদেশিদের ভিসা কমিয়ে দিতে পারে ইউরোপ

ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ কারণে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ইইউ। তবে বাংলাদেশ মনে করে কোভিড ও অন্যান্য কারণে ফেরত আনার যে ধীরগতি ছিল সেটি ত্বরান্বিত হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশির তালিকা দিয়েছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত মন্থর ছিল। তবে গত একমাসে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশির নাগরিকত্ব যাচাই বাছাই করে ইইউকে জানানো হয়েছে।

২০১৭ সালে ইউরোপ থেকে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। প্রথমদিকে ফেরত আসার হার ইইউ এর কাছে সন্তোষজনক মনে হলেও পরবর্তীতে যাচাই বাছাই এর ধীরগতির কারণে ভিসা কম দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ইইউ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি। যাতে করে বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। এটি নতুন একটি জিনিস। কেসগুলো মিটিয়ে ফেলার জন্য আমাদের যে সফটওয়্যার বা অন্যান্য মেকানিজম ছিল সেগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল।’

কর্মরত লোকদের প্রশিক্ষণ কিছু বাকি ছিল এবং সক্ষমতার কিছু ঘাটতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে কোভিডের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছি। এর কারণে অনেক অফিস আদালত বন্ধ ছিল এবং মাঠ পর্যায়ে তদন্ত বন্ধ ছিল।

আমাদের দিক থেকে আন্তরিকতার অভাব নেই। সবাইকে নিয়ে যে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে তা আমরা দূর করার চেষ্টা করবো বলে জানান তিনি।

২০১৭ সালে স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর সই করা হয়েছিল। তখন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে বলা আছে বাংলাদেশি হলে ফেরত পাঠানো হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে যারা প্রকৃত বাংলাদেশি তাদের ফেরত আনা। কিন্তু এই সংখ্যাটা যদি দৃশ্যমানভাবে বড় না হয় তবে খালি মুখের কথায় কাজ হবে না।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তাদের দিক থেকে বোঝা দরকার আমরা কোভিডের কারণে অনেক দিক থেকে বাধাগ্রস্ত আছি। প্রশিক্ষণ বা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত বা বিভিন্ন দেশে দল পাঠানো কোনওটি ঠিকমতো করা সম্ভব হয়নি।’

সবার সহযোগিতা প্রয়োজন

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। তারা যদি সহযোগিতা না করে এবং ভুল তথ্য দেয়, তবে সেই ভুল তথ্যের পিছনে দৌড়াতে গিয়ে আমাদের অনেক দেরি হচ্ছে। এটি বেশ জটিল বিষয়। যেসব দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত  বাংলাদেশিদের বিষয়ে অভিযোগ আছে সেখানে ঢাকা থেকে লোক পাঠিয়ে অন-দ্যা-স্পট আরও কিছু করা যায় কিনা সেটি বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, ‘মাল্টায় আমরা একটি দল পাঠিয়েছিলাম এবং প্রাথমিকভাবে ভিকটিমরা খুব শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করেছিল। সহযোগিতা করছিল না। পরে যখন তাদের বোঝানো হয়েছে তখন অনেকে রাজি হয়েছে ফিরে আসার জন্য।’

সবচেয়ে বেশি জার্মানিতে

‘মোট কেসের মধ্যে জার্মানিতে রয়েছে প্রায় ৮০০। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল ওইদেশ সফর করার সময়ে প্রায় ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে মাত্র একজন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় যা জার্মান সরকার ভালোভাবে নেয়নি।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জার্মানরা উদ্বিগ্ন কারণ তাদের ওখানে সংখ্যাটি বেশি। কিন্তু ইতালি বেশি উদ্বিগ্ন না।

আমাদের আন্তরিকতা ও বর্তমানে যে সংখ্যাটি বেড়েছে সেটি বিবেচনায় নিলে তারা হয়তো যা বলছে সেটি তারা করবে না বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।