নেতৃত্ব দিতে ছাত্রলীগের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্টের ঘটনা।)

সব ধরনের সামাজিক অপরাধের কবর রচনার জন্য একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১৯৭৩-৭৪ এর নবনির্বাচিত নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অনাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের প্রতি সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম নবনির্বাচিত সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের জাতির পিতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

বঙ্গবন্ধু গ্রামপর্যায়ে গণপ্রতিরোধ কমিটি গঠনের কাজে নেতৃত্ব গ্রহণ এবং জাতীয় জীবনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয় জনমত গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত নেতাদের নির্দেশ দেন। চরিত্র গঠনের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের পরামর্শ দেন। জাতীয় চরিত্র গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার পবিত্রতা রক্ষায় পরীক্ষার হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করারও আহ্বান জানান তিনি। এসময় ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন।

১৯৭৩ সালের ২৪ আগস্টের পত্রিকার একাংশআলজিয়ার্সে ইন্দিরা-মুজিব বৈঠকের সম্ভাবনা

আলজিয়ার্সে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধী সেপ্টেম্বরের শুরুতে আলজিয়ার্স যাত্রা করবেন এবং ৭ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত সেখানে থাকবেন। খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু সম্ভবত জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর কমিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে গ্রহণের পর ৩ বা ৪ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্স যাত্রা করবেন।

দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ও শরণ সিং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগদানের জন্য ২ তারিখ আলজিয়ার্স যাবেন। তারাও মুজিব-ইন্দিরা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন। এখানকার উপমহাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর বৈঠকের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তাদের মতে, দুই প্রধানমন্ত্রী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই দফা আলোচনার পর উপমহাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ গ্রহণ করবেন।

সূত্র জানায়, তাঁরা উপমহাদেশের মানুষের সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তির ব্যাপারে পাকিস্তানের অনমনীয় মনোভাব নিয়ে মতবিনিময় করবেন এবং সমস্যা সমাধানের যৌথ কর্মপন্থা বের করবেন।

১৯৭৩ সালের ২৪ আগস্টের পত্রিকার একাংশপাক-ভারত বৈঠক অব্যাহত

ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা এদিন আধাঘণ্টা আলোচনা করেন। তবে আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে কোনও বিবৃতি প্রচার হয়নি। আলোচনায় যোগদানকারী অন্যতম পাকিস্তানি সদস্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মহাসচিব আবদুস সাত্তারের কথাবার্তায় মনে হয় তারা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। সাত্তার আভাস দেন, পরের দিন কিংবা তারও পরেরদিন ঐকমত্যে পৌঁছানো যেতে পারে। তিনি বলেন, ঐকমত্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে একমত হওয়া যায়।

এনা জানায় এই বৈঠক সম্ভবত দীর্ঘতম ও সবচেয়ে নাটকীয় ও উত্তেজনাকর ছিল। আজকের দিনের বৈঠক দুই দফায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফা বৈঠক শেষে পাকিস্তানের নেতা অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, তারা চা খাওয়ার জন্য আরেকটি কক্ষে যাচ্ছেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা এসে সাংবাদিকদের বলেন, আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার মুখে কোনও হাসি ছিল না। প্রায় ১৫ মিনিট পর আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের সামনে আসেন এবং বলেন, দীর্ঘ বিবৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বিবৃতি দেওয়া হবে না। পরদিন আবারও আলোচনায় মিলিত হবেন বলে জানান এবং এরপর তিনি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যান।