বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের আওতায় আসবে ৬৪ জেলা

গ্রামে রান্নার কাজে আর কাঠ বা লাকড়ি নয়। শহরের মতোই গ্যাসেই রান্নার কাজ চলবে গ্রামে। এ জন্য সরকার দেশের ৬৪ জেলার সকল উপজেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমেই বর্তমান সরকারের ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’  শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের মতো এই গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান হবে বিশাল জনগোষ্ঠির। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে দেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ১ লাখ ২৮ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে,  প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব এবং জনমুখী। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রান্না ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমিবে, এর ফলে দেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন সম্ভব হবে। তাছাড়া, ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে খামার এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের ফলে গ্রামীণ যুবদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। 

পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা এবং একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা প্রকল্প প্রস্তাবে জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় যুব উন্নয়ন অধিদফতর ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়িত হবে। এর জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ সম্পূর্ণ ২০৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগামী ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

যুব মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন এবং যুবদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।

সূত্র জানায়, ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এর জন্য গবাদি পশুর খামার স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি খামারে কমপক্ষে ২ জনের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এক লাখ ২৮ হাজার যুবকের। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ জন যুবকের। প্রকল্পের অনুকূলে রিভলভিং ক্রেডিট ফান্ড পরিচালনা বাবদ রাখা হবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় যানবাহন ও যন্ত্রপাতিও কেনা হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুবসম্পদে পরিণত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যার সঙ্গে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের আওতাধীন পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে ইউএনও অফিসে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। উপজেলার কোথায় কোথায় এইসব প্লান্ট স্থাপিত হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে বিষয়টি মাথায় রেখে সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করে রাখার জন্য আমাদেরকে বলা হয়েছে। আমরা সেই মাফিক ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন স্থান খোঁজার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের অংশ। গ্রামে শহরের পরিবেশ নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে কর্মস্থান নিশ্চিত হবে অন্যদিকে ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন হবে। রান্নাঘরে বিরাজ করবে শহরের আমেজ।