জিয়া পাকিস্তানি বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বে কখনও বিশ্বাস করতেন না। তাকে ধরে এনে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরও জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।’

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খন্দকার মোশতাক দোসর হিসেবে পেয়েছিল জিয়াউর রহমানকে। সেই (জিয়া) ছিল তার (মোশতাক) শক্তি, মূল শক্তির উৎস। কারণ, ক্ষমতা দখল ও হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা তার দরকার। সেই মোশতাক ও জিয়া মিলেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার এই চক্রান্তটা করেছিল।’

তিনি বলেন ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদ সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে। কারণ, জিয়া ছিলেন মোশতাকের মূল শক্তি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোশতাক জিয়ার ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। কিন্তু সে কতদিন থাকতে পেরেছিল? থাকতে কিন্তু পারেনি। মীর জাফরও পারেনি। কারণ, বেইমানদের ব্যবহার করে সবাই। তাদের বিশ্বাস করে না, রাখে না। জিয়াউর রহমান সেই কাজটাই করেছিল। মোশতাক কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারেনি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। জেলখানা হত্যাকাণ্ডও হয় জিয়াউর রহমানের নির্দেশে। সে-ই করেছে। কারণ, সে-ই সব ক্ষমতার অধিকারী ছিল তখন।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘১৫ আগস্ট যখন আমাদের বাসায় গুলি শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর সঙ্গেও কথা হয়। সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল, তারা কিন্তু কাজ সঠিকভাবে করেনি। এর পেছনে রহস্যটা কী? সেটাই কথা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যে কোথায় যুদ্ধ করেছেন এমন ইতিহাস কোনও দিন শোনা যায়নি। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তাঁর সেই ধরনের কোনও ইতিহাস নেই। আমাদের চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা... আমাদের এমপি মোশাররফ সাহেব আছেন। তিনি সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। তারা কিন্তু তাঁর নাম দিয়েছিল “মিস্টার রিট্টিট”। ওনাদের কাছে গল্প শুনেছি, যেখানেই যুদ্ধ লাগতো তার চেয়ে অন্তত তিন মাইল দূরে থাকতো জিয়াউর রহমান। সে কখনও অস্ত্র হাতে সামনাসামনি যুদ্ধ করেনি। তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল কিছু দিনের জন্য।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কোনও সরকারই দেশের উন্নয়ন করেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান কিছু প্রচার পেয়েছিল।  সে নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। যে দেশে প্রতিরাতে কারফিউ থাকে, সেটা আবার গণতন্ত্র হয় কীভাবে? ভোট চুরি থেকে সবকিছুই এই জিয়াউর রহমান শুরু করে। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘন করাও সে শুরু করে।  আমাদের সৌভাগ্য যে হাইকোর্টের একটি রায় দিয়ে সামরিক আইন দিয়ে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে মারামারি করলো বিএনপি। তারা জানে না সেখানে জিয়ার কবর নেই, তার লাশ নেই। তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে। খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা জিয়ার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। বা কোনও একটি ছবি কেউ দেখেছে? দেখেনি। কারণ, ওখানে কোনও লাশ ছিল না। সেখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে তারা জানে। সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পরা ছিল লাশ। জিয়াউর রহমান তো তখন প্রেসিডেন্ট। সে তো কমব্যাট ড্রেস পরে না। এটা কী বিএনপির লোকেরা জানে না। সেখানে গিয়ে তাদের মারামারি-ধস্তাধস্তির চরিত্র তো এখনও যায়নি।’

১৯৮১ সালে নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিরে আসার পরে সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। বনানীতে সারি সারি কবর পেলাম। তবে পেয়েছি লাখো মানুষ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের ভালোবাসা ও আস্থা-বিশ্বাস। তাই বলতে পারি, আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। বাংলাদেশটাই আমার পরিবার। সেভাবে দেশটাকে দেখি। যতটুকু কাজ করতে পারবো, মনে হয় তাতে আমার আব্বা-আম্মার আত্মাটা শান্তি পায়। সেই চিন্তা করেই কাজ করি। তাই আমার কোনও মৃত্যু ভয়, আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া নেই।  আমি নিজের জন্য কিছু করতেও চাই না।’

বিগত ১২ বছরের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারির এই সময়ে একমাত্র আওয়ামী লীগই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাদের খান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল, উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আখতার হোসেন, উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। গণভবন প্রান্তে স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।