ভারত-পাকিস্তান চুক্তি: যা বললেন বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৯ আগস্টের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষরিত ভারত-পাকিস্তান চুক্তিটিকে উপমহাদেশের শান্তিকামী জনগণের বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খবরে প্রকাশ, চুক্তির পরদিন সন্ধ্যায় গণভবনে জাতীয় সংবাদপত্র ও বার্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন বঙ্গবন্ধু। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ।

ওই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। ভারত-পাকিস্তান চুক্তি স্বাক্ষরে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। এ চুক্তি উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি নিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চুক্তিতে যা বলা হয়

চুক্তিতে এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে যে আটক লোকদের ফেরত পাঠানোর সময়সীমার প্রশ্নটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে না।

১৯৭৩ সালের ৩০ আগস্টের পত্রিকার একাংশউপমহাদেশে মানবিক সমস্যাগুলোর সমাধান এবং দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিচার-আলোচনা ও এর নিষ্পত্তি হবে।

১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার ভিত্তিতে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লিতে বৈঠকের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরে তা পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত ও পাকিস্তানের দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রথমে পিন্ডিতে বৈঠকে মিলিত হন। পরে দিল্লিতে ১৮ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত আরও একদফা বৈঠক করেন এবং মতৈক্যে পৌঁছান।

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা শেষে ঢাকা-দিল্লি ইসলামাবাদের যুগপৎ চুক্তির বিবরণ প্রকাশ করা হয়। নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষরিত ভারত-পাকিস্তান চুক্তিতে পাকিস্তানে আটক সমস্ত বাঙালি, ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী এবং প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাকিস্তানিকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিবেচিত হয়েছে।

চুক্তিটি সন্ধ্যায় একযোগে ঢাকা, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে প্রকাশ করা হয়। খবরে বলা হয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন হওয়া মাত্রই শুরু হবে ভারত থেকে যুদ্ধবন্দি ও অন্তরীণ বেসামরিক ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া।

চুক্তিতে বলা হয়, প্রধান ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বক্তব্য যা-ই থাকুক না কেন, অবিলম্বে এসব মানবিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯৭৩ সালের ৩০ আগস্টের পত্রিকার একাংশপাকিস্তান চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, এই চুক্তি উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শুভ পদক্ষেপ। বিবৃতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে আটক বাঙালিরা ফিরে আসবে এটাই আমার কাছে খুশির খবর।

প্রতিক্রিয়া জানায় সারা বিশ্ব

১৯৭১ সালের যুদ্ধ-পরবর্তী মানবিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাক্ষর হওয়া নয়াচুক্তিকে জাতিসংঘের কূটনীতিকরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকায় এ ব্যাপারে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য এ ঘটনায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন বলে জাতিসংঘ মুখপাত্র মন্তব্য করেন।

খবরে জানা যায়, ভারত, পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধানের পথে একটি সন্তোষজনক পদক্ষেপ হিসেবে চুক্তিটিকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এক ঘোষণায় বিশেষভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।