আটকে পড়া বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

যত দ্রুত সম্ভব পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত নেওয়া এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের বরাত দিয়ে এদিন বাসসের দিল্লি প্রতিনিধির খবরে বলা হয়, ভারত সরকারও যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গেছে, পাকিস্তানের লোক বিনিময়ে জাহাজ সংগ্রহে জাতিসংঘের সাহায্য কামনা করেছে বাংলাদেশ।

২৮ আগস্ট দিল্লিচুক্তি অনুযায়ী একই সময়ে এ ত্রিমুখী বিনিময় চলবে। চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের জাহাজযোগে পৌঁছাতে হবে। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের শিবির থেকে ট্রেনযোগে পাকিস্তান সীমান্তে পৌঁছানো হবে।

১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার একাংশঅন্যদিকে সুইজারল্যান্ড ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই সরকার যেভাবে ঠিক করবে সেভাবেই বাঙালি ও পাকিস্তানিদের বিনিময় হবে। কাজ শুরুর সকল প্রস্তুতি শেষ হলে তারিখ ঘোষণা হবে বলে জানা যায়।

আটক নাগরিক পুনর্বাসনে জাতিসংঘের ব্যাপক কর্মসূচি

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের পৃথক পৃথক অনুরোধক্রমে আটক নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘ কয়েক লাখ ডলারের একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে উভয় সরকার জাতিসংঘের সাহায্যের জন্য মহাসচিব কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

জাতিসংঘের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদানের সম্ভাব্য দিক পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে আগা খান ফাউন্ডেশনকে।

১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার একাংশআলজিয়ার্স সম্মেলনে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নায়ক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলজিয়ার্স যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু সেখানে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে যোগদানকারী বিভিন্ন জোট নিরপেক্ষ দেশের নেতারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রামের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানাবেন।

আলজিয়ার্সের প্রেসিডেন্ট বুমেদিন বঙ্গবন্ধুকে সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ১০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে বর্তমানে আলজিয়ার্সে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য শামসুল হকও দেশে ফিরবেন।

১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার একাংশনিরপেক্ষতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অঙ্গ

আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুবই স্বাভাবিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সক্রিয় সাহায্য ও সহানুভূতি স্বাধীনতা আন্দোলনকে সফল করলেও বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অন্তর্ভুক্ত দেশ বলা যায় না। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়— বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত এ নীতির সঙ্গে আলজিয়ার্স সম্মেলনের আদর্শগত সামঞ্জস্য রয়েছে।