১৯৭৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আবারও নতুন পদক্ষেপ নিতে হয়

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এদিনে দেড়শ’ থানায় রক্ষীবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সমাজবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে সরকার দেশের দেড়শ’টিরও বেশি থানার সদর দফতরে অবিলম্বে পর্যাপ্ত রক্ষীবাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সরকারি সূত্রে এ কথা জানানো হয়।

খবরে প্রকাশ, দেশের নিরীহ নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর সরকার উপরোক্ত নির্দেশনা দেয়।

এর মাত্র কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন। সূত্র জানায়, ভিন্ন থানা সদর দফতরে রক্ষীবাহিনী মোতায়েন করা ছাড়াও সব জেলা ও মহাসড়ক দফতরে পর্যাপ্ত পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী মোতায়েন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোয় পুলিশের তৎপরতায় সাহায্য করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট নির্দেশও দেওয়া হয়।

দৈনিক বাংলা, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

প্রত্যাগত বাঙালিদের পুনর্বাসন

পাকিস্তানে আটকে থাকা যেসব বাঙালি ফিরে আসছেন তাদের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সব করা হবে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী সোহরাব হোসেন জাতীয় সংসদে আশ্বাস দেন, পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা বাঙালিদের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আছে। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা বাঙালিদের জন্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সদস্যরা তা জানতে চান। প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত সরকারি বাঙালি কর্মচারীদের এক মাসের অগ্রিম বেতন ও এক মাসের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব কর্মচারী পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় বা অনুরূপ সংস্থায় কর্মরত ছিলেন তাদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য দেশের সব স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুটির শিল্প করপোরেশন বিল পাস

দেশে একটি কুটির শিল্প সংস্থা স্থাপনের উদ্দেশ্যে এদিন জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশন ১৯৭৩ বিল বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়। শিল্পমন্ত্রী জানান, আগামী পরিকল্পনায় ১২১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। গ্রামাঞ্চলের মানোন্নয়নের জন্য কুটির শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিন লক্ষ ৩০ হাজার ৪৩৬টি কুটির শিল্প দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৮৭৮ ব্যক্তি এই শিল্পের উৎপাদন কাজে নিয়োজিত। এই শিল্পকে উৎসাহিত ও সম্প্রসারিত করে মৃতপ্রায় কুটির শিল্পগুলোর ব্যবহার এবং পরিবারভুক্ত কুটির শিল্প লোকদের মধ্যে আধুনিক কৌশল ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই সংস্থার কাজ।

দ্য অবজারভার, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

কুটির শিল্প বাঁচাতে যা বলেছিলেন জয়নুল আবেদীন

বাংলাদেশের কুটির শিল্প লুপ্তপ্রায়। এ শিল্পকে বাঁচাতে ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব নয়, কুটির শিল্পে যারা সত্যিকার অর্থে জড়িত তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত কয়েকজন শিল্পী এ মন্তব্য করেন। কুটির শিল্প রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। গ্রামে গ্রামে এই উদ্যোগ বেকারত্ব কমাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।