বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সমাপনী ভাষণে যা বলেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এদিন জাতীয় সংসদের শরৎকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সমাপনী ভাষণে জনগণের কল্যাণে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যেতে তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বিধানে তিনি সরকারের সংকল্প এদিন পুনরুল্লেখ করেন।

সংসদে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার দুষ্কৃতকারী সমাজবিরোধীদের নির্মূল করার জন্য সংকল্পবদ্ধ। তিনি পরিষ্কার জানান যে, অস্ত্রের ভাষায় ভ্রুকুটি সরকার কিছুতেই সহ্য করবে না। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার কিছুতেই এই ধরনের হুমকি সহ্য করতে পারে না। পরবর্তী নির্বাচনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারের পরিবর্তন বর্তমান সরকার মেনে নেবে। কিন্তু অস্ত্রের মুখে নতি স্বীকার করবে না।

শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার আসবে সরকার যাবে। কিন্তু জাতিকে স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে হবে। তিনি আশ্বাস দেন, সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হবে না।

দেশের নানাবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল বলেন, সরকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য সকল চেষ্টা করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ভৈরব ব্রিজ উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

তিনি বলেন, ‘হয়তো কঠিন সময় উপস্থিত হবে এই দুই মাস। বরাবরই এই দেশের সংকটকাল। এই সময় বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।’

 এ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, কালোবাজারি, মুনাফাখোর ও সমাজবিরোধী শক্তিকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। সংসদে সৈয়দ নজরুল ঘোষণা করেন, দুনিয়ার কোনও শক্তি দেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে সমর্থ হবে না। দেশমাতৃকাকে স্বাধীনতা কীভাবে রক্ষা করতে হয় বাংলাদেশের জনগণের তা জানা আছে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক বিরোধিতার অধিকার সবার আছে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ চালাবার অধিকার কারও নেই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, যদি কেউ অস্ত্রের ভাষায় সরকারের বিরোধিতা করতে চায় বা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায় কিংবা তিন মাসের মধ্যে সরকারকে উৎখাত করতে চায় তাদের সম্পর্কে সরকার চোখ বুঁজে থাকতে পারে না।

দ্য অবজারভার, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

বঙ্গবন্ধুর বাণী

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ভৈরব রেল সেতু পুনর্নির্মাণ করে নিয়মিত যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে সর্বাত্মক জাতীয় প্রকাশে গৌরবোজ্জ্বল পদক্ষেপ বলে অভিহীত করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভৈরব সেতু উন্মুক্ত করা উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেন, এ সেতু পুনরায় চালু হলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ও দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। যা জাতীয় অর্থনৈতিক জীবনে প্রেরণা যোগাবে এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চলের দ্রুত খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠানো সহজ হবে।

সেতুটি পুনর্নির্মাণে ভারত, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য বন্ধুদের প্রদত্ত সাহায্যের কথাও তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেতুটি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে মেরামত ও পুনরায় চালু করার কাজে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য পরিচালনায় ইঞ্জিনিয়ার, কারিগর, কর্মী ও শ্রমিকরা তাদের কর্তব্য সম্পাদন করেছে।

ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূত এডভার্ড কেনেডি এদিন জাতীয় সংসদের চেম্বারে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একটি চেক প্রদান করেন।

এদিন সংসদের অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অধিবেশনের শেষ দিনে আরও চারটি বিল পাস হয়। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিল ১৯৭৩, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিল ১৯৭৩, বাংলাদেশ গার্লস গাইড সমিতি বিল ১৯৭৩, ওয়্যার হাউসিং করপোরেশন সংশোধনী বিল ১৯৭৩।