বঙ্গবন্ধু আরবদের সম্ভাব্য সব সাহায্য দিতে আবারও প্রতিশ্রুতি দিলেন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ অক্টোবরের ঘটনা।)

আরব ভাইদের সম্ভাব্য সব সাহায্য করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আরব ভাইরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দেন ১৯৭৩ সালের এইদিন।

বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শুরুতে চা পাঠান, এরপর মেডিক্যাল টিম পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সর্বশেষ মিসর ও সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টের নিকট আরবদের প্রতি তার সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তারবার্তা পাঠান। বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান লড়াইয়ে তারা অবশ্যই বিজয়ী হবে এবং তা হবে সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বিজয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তাঁর বাণী অর্পণের জন্য মিসরের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে কূটনীতি-বহির্ভূতভাবে গণভবনে ডেকে পাঠান। সাধারণত নিয়ম হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ করতে হয়।

দৈনিক বাংলা, ১৬ অক্টোবর ১৯৭৩

প্রবাসী বাঙালিদের বিক্ষোভ

এদিন বিকালে লন্ডনে আরও অন্যান্য মুসলমান রাষ্ট্রের ১০ হাজার লোকের যে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিরাও যোগদান করেন। বাঙালিরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করেন এবং লন্ডনস্থ ইসরায়েলি ও মার্কিন দূতাবাসে নিন্দা সংবলিত প্রতিবাদলিপি প্রদান করেন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা আরবের সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

 

অবাঙালিদের ছাড়পত্র দিতে পাকিস্তানের টালবাহানা

পাকিস্তান সরকারের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের অভাবে প্রায় ১৫ হাজার পাকিস্তানি বাংলাদেশে আটকা পড়ে। দিল্লিচুক্তি অনুযায়ী এদের পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার কথা। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে অনিয়মিতভাবে। ফলে আটক বাঙালিদের নিয়ে আসা উড়োজাহাজ প্রায় খালি যাচ্ছে। গত দু’দিন আগে মাত্র ১৫ জন পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে যেতে পেরেছেন।

পাকিস্তান সরকারের এই অদ্ভুত আচরণ ও মনোভাব সরাসরি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের অবস্থানকারী পাকিস্তানিদের ওপর। ইতোমধ্যে তারা তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে বহু পাকিস্তানি যারা পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার চিন্তা করতে শুরু করেন।

কিছু পাকিস্তানি অপশন প্রত্যাহার করার জন্য কর্তৃপক্ষের দুয়ারে ধরনা দিতে শুরু করেন। একইসঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের শরণাপন্নও হচ্ছেন তারা।

ডেইলি অবজারভার, ১৬ অক্টোবর ১৯৭৩

উল্লেখ্য, ২ লাখ ৬০ হাজার পাকিস্তানি নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অপশন দিয়েছিলেন। ২ লাখ অবাঙালি বাংলাদেশে থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। দিল্লিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২ লাখ ৬০ হাজার অপশন দেওয়া অবাঙালির মধ্যে মাত্র ৮০ হাজারকে ফেরত নিতে পাকিস্তান স্বীকৃত হয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার আইসিআরসির মাধ্যমে ২০ হাজার পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুকদের তালিকা পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল। এরমধ্যে মাত্র ৫ হাজার পাকিস্তানি ফেরত যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ক্লিয়ারেন্স প্রদানে কোনও কারণ না দেখিয়ে টালবাহানা শুরু করে পাকিস্তান।

সম্প্রতি পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনকারী একজন পাকিস্তানি বাংলাদেশে অবস্থানরত এক আত্মীয়কে জানিয়েছেন, পাকিস্তান সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কোনও অবাঙালিকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। যে কয়জন এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে যেতে পেরেছে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তান সরকার ইতোপূর্বে অবাঙালিদের না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ৮০ হাজার অবাঙালিকে নিতে রাজি হলেও বিনিময় শুরুর পর এই টালবাহানা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। অপশন দেওয়া পাকিস্তানিরা ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন, পাকিস্তান তাদের ফেরত নেবে না। তাই কেউ কেউ অবস্থান শিবির থেকে পালাতে শুরু করেছেন। শিবির থেকে পাকিস্তানিদের পলায়ন গত কয়েকদিন ধরে রীতিমতো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।