রোহিঙ্গা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের বোঝা: প্রধানমন্ত্রী 

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসাবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অ্যান জিরার্ডভ্যান লিউয়েন রবিবার (১৭ অক্টোবর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর ইতোমধ্যে তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। তারা আমাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে পরিবেশ ও বন সম্পদ ধ্বংস করছে।

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সম্পর্কে আলাপকালে বলেন, তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। 

তিনি জানান, নেদারল্যান্ডের দূত রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বাস্তু এবং এনজিও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কাছে মনে হয়েছে, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেশের উন্নয়ন ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নে নেদারল্যান্ডসের অবদানের প্রশংসা করেন। এ লক্ষ্যে তিনি নেদারল্যান্ডসের মতো ভূমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থানের কথা স্মরণ করেন। 

নেদারল্যান্ডে তার শেষ সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, গ্রিন হাউজ পদ্ধতি ব্যবহার করে সেখানে কৃষি সামগ্রীর উৎপাদন ও সংরক্ষণ দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশও কৃষিভিত্তিক। তাই আমরাও এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারি।’ ডাচ দূত বলেন, তারা এই লক্ষ্যে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আগ্রহী। 

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পানি সংরক্ষণ বৃদ্ধির পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশে নদী ড্রেজিং করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় সমুদ্রসৈকতে আরও পর্যটক আকৃষ্ট করতে তার সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করছে। তিনি বলেন, তার সরকার দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে গতিশীল করতে দেশের অভ্যন্তরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে।

ডাচ রাষ্ট্রদূত অ্যান জেরার্ড ভ্যান লিউওয়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন।

পরে বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত ড. বংশীধর মিশ্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলছে। নেপাল বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারে।
তিনি নেপালকে মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় নেপালের সহায়তার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। নেপালের রাষ্ট্রদূত তাদের কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চান।

নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রয়োজনের সব সময় বাংলাদেশকে কাছে পাওয়া এবং পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং নেপালে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বাংলাদেশের চিকিৎসা সহায়তার কথা স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত হাঁড়িভাঙা আম পাঠানোর জন্য তার দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও প্রধান সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। খবর: বাসস