আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার ঘটনা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে, অন্য কোনও দল দাঁড়ায়নি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এর দায় এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রবিবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সম্পাদক ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন, মহাসচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার ও সদস্যদের মধ্যে দুলাল আহমেদ চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন, শরীফ সাহাবুদ্দিন, মফিজুর রহমান, উপদেষ্টা আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া সভায় অংশগ্রহণ করেন।

মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ সময় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছিলাম যাতে দুর্গাপূজা চলাকালীন পূজামণ্ডপে আমাদের দলের লোকজন থাকে এবং কেউ কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে। আমাদের নেতাকর্মীরা সেভাবে ছিল। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তাদের আরও বড় পরিকল্পনা ছিল, আমাদের দল হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিধায় ষড়যন্ত্রকারীরা সে রকম করতে পারেনি। কয়েক ঘণ্টার নোটিশে আমাদের দল সারা দেশে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমরা এখনও সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

‘আমরাই শুধু পাশে দাঁড়িয়েছি, বাকিরা‑ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা‑ এমনকি গয়েশ্বর বাবুসহ অন্যরা শুধু টেলিভিশনের সামনেই গলা ফাটান, মানুষের পাশে দাঁড়াননি, বরং তারা এই ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে এবং সমুদ্রের ওপার থেকে এই ঘটনার পরিকল্পনা হয়েছিল, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ১০২টি মামলা হয়েছে, ৬শ’ জন গ্রেফতার হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জে কয়েক দিনের মধ্যে সবার ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার এক লাখ টাকার বেশি নগদ সহায়তা পেয়েছে। অন্যান্য জায়গায় যে কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়েছে, সেগুলো মেরামতের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, যারা ঘর হারিয়েছে তাদের ঘর করে দেওয়া হবে। 

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের প্রচারণার ফলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়’, সম্পাদক ফোরাম সদস্যদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনাটি যদি সোশাল মিডিয়ায় আপলোড না হতো, তাহলে এই ঘটনা বিস্তৃত হয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনাও সোশাল মিডিয়ার একটি পোস্টের কারণে। যে কোরআন শরিফ রেখে এসেছে, যে প্ররোচনা দিয়েছে, যারা একটি পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই না করে সমাজে হানাহানি তৈরি করলো, তারা সবাই দায়ী। একই সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও দায়ী। কারণ, তাদের মাধ্যম ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে, এখানে তারা দায় এড়াতে পারে না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই কোনও কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। কিন্তু সবকিছুই এমনভাবে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে খারাপ কাজে ব্যবহৃত না হয়। সেখানে যাতে স্বচ্ছতা থাকে। ফেসবুকে পরিচয় গোপন করে ফেইক আইডি দিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এটির তো প্রতিকার হওয়া দরকার। সামাজিক মাধ্যম আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা। এটির অনেক ভালো দিক আছে।

মন্ত্রী জানান, অনিয়মিত অনেক দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ২শ’ পত্রিকা যেগুলো বের হয় না, সেগুলোর ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদপত্র যদি সঠিকভাবে বিল না পায় তাহলে তাদের পক্ষে সংবাদপত্র পরিচালনা করা, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, কর্মচারীসহ সবার বেতন ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং এটি যাতে না হয়, আমরা খেয়াল রাখছি।