অর্থের চেয়ে প্রীতি-সদিচ্ছার গুরুত্ব বেশি: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৫ অক্টোবরের ঘটনা।)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে তার দেশের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং এজন্য চুক্তির প্রয়োজন হয় না। বঙ্গবন্ধু বলেন, এখানে আসতে পেরে তিনি খুব খুশি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলোচনা করেও তিনি খুশি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব আমাদের আন্তরিক ভালোবাসা থেকে উৎসারিত। যার জন্য চুক্তির প্রয়োজন হয় না।

জাপান সফর ও অধিকতর জাপানের সাহায্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, অর্থই সব নয়। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোবাসা, প্রীতি ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা পারস্পরিক সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, তার জাপান সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ। জাপানের জনসাধারণ তার প্রতি যে ভালোবাসা ও অকৃত্রিম স্নেহ প্রদর্শন করেছে, তাতে তিনি অভিভূত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ভালোবাসা তার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে জানানো হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নকারীকে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণ করতে চায়। বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনের মনোভাব ও জাতিসংঘভুক্তির প্রশ্নে চীনের নীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি স্বীকৃতি ভিক্ষা চান না। এরমধ্যে শতাধিক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থায় বাংলাদেশের আসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন জাতিসংঘের।

কুয়ালালামপুরে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ বহু বিষয়ে কথা বলেন। একজন মুখপাত্র বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে বলে মুখপাত্র আশা করেন।

বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান এবং বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ইফতারের আয়োজন করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্র সচিব এনায়েত করিম।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানানোর প্রস্তাব গ্রহণকারীর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম ও প্রথম উদ্যোগী দেশ।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ অক্টোবর ১৯৭৩

মার্কোস-বঙ্গবন্ধু বৈঠক

জাপানে ছয় দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যানিলা বিমানবন্দরে স্বল্পকাল অবস্থান করেন। এ সময় তিনি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ তাদের কাছে কৃষি উন্নয়নে সহযোগিতা চেয়েছে। তারা দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এরমধ্যে ফিলিপাইন ১২ হাজার টন ধানের বীজ দিয়েছে বাংলাদেশকে।

ম্যানিলা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাগত জানান। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিরাট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা বলে অভিহিত করেন। মার্কোস বলেন, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন একটি নতুন জাতির মুক্তিদাতা। প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য তার বিরাট শ্রদ্ধা রয়েছে এবং তার সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে তিনি অভিনন্দন জানান।