১৯৭৩: সেদিন ছিল ঈদ-আনন্দ ও বেদনার উদযাপন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৮-৩০ অক্টোবরের ঘটনা।)

 

১৯৭৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঈদুল ফিতরের দিন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের জনগণকে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানান। শত না পাওয়া ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাওয়া জাতির যে লড়াই, সেটাকে এগিয়ে নেওয়ার শপথও ছিল সেই আহ্বানে। আন্তর্জাতিক পরিসরে সেইসময় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিও তখন আলোচনায়।

১৯৭৩ সালের ঈদুল ফিতরের ছবি, দৈনিক বাংলা

জাতিসংঘের জরুরি শান্তিবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের পথে

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি তদারকির জন্য জাতিসংঘ সামরিক বাহিনীর অগ্রগামী দল হিসেবে তিনটি দেশের সৈন্য জাতিসংঘের পতাকা নিয়ে সাইপ্রাস থেকে পশ্চিম এশিয়ার পথে যাত্রা করে। দেশ তিনটি হল ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও সুইডেন। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে জাতিসংঘ জরুরি বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

অন্যান্যবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য বৃহৎ শক্তির সৈন্য এতে থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার সামরিক ঘাঁটিগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর জাতিসংঘ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিক্সন প্রশাসন বলে, তারা পশ্চিম এশিয়ার নাজুক যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতিতে মস্কোর নিজস্ব শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রদানের আশঙ্কা করেছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ১৪-০ ভোটে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধবিরতি তদারকির জন্য জরুরি বাহিনী গঠনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

 

শেরেবাংলা বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক

দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মশতবার্ষিকী (২৯ অক্টোবর, ১৯৭৩) পালিত হয়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনাসভা আয়োজন হয় এদিন। তাতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোরবান আলী। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মেহনতী মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

সভাপতির ভাষণে কোরবান আলী বলেন, শেরে বাংলা আনীত ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তানের কথা ছিল না। তাই তিনি পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলেন। কোরবান আলী শেরে বাংলার সংগ্রামমুখর জীবনের ওপর আলোকপাত করে বলেন, তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। আগামী দিনের সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের জন্য তার আদর্শই বঙ্গবন্ধু সরকার ও জনগণের পাথেয়।

আলোচনায় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, শেরে বাংলা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধুর কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েমের মাধ্যমে বাংলার মানুষের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শেরে বাংলার আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। দুঃখ-দারিদ্র্য দূর করে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো ছিল এই নেতার রাজনৈতিক দর্শনের মূলমন্ত্র। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়ক শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা এ মন্তব্য করেন।

 

যুদ্ধে থামলেও আরবরা আমেরিকায় তেল দেবে না

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অবসান বা যুদ্ধবিরতি হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবসান হবে না বলে তেল উৎপাদনকারী মহল জানায়। পাশ্চাত্য জগতের অন্যান্য দেশে রফতানির যৌথ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইতোমধ্যে নমনীয় মনোভাব দেখালেও আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ বন্ধের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না বলে জানায় উৎপাদনকারী দেশগুলো।