১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো গৃহগণনা শুরু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বরের ঘটনা।)

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, লোক ও গৃহস্থালির গণনার কাজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাপার নয়, এ প্রক্রিয়ায় নির্ভুল ও সঠিক তথ্য সংগ্রহের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্ভর করে। ১৯৭৩ সালের এইদিনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি গৃহ ও প্রতিষ্ঠান গণনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি ভবনের দেয়ালে ২/২/৩ ১ ১ ক্রমিক সংখ্যা লেখার মধ্য দিয়ে গৃহগণনার কাজ শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল, আদমশুমারি কমিশনার, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল রাষ্ট্রপতিকে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার অনুরোধ জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি গণনা ও গৃহগণনায় গুরুত্ব আরোপ করে সাফল্য কামনা করেন।

আবারও বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য করার আহ্বান

এইদিন মস্কোয়ে সমাপ্ত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে গৃহীত রিপোর্টের জরুরি কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিমলা চুক্তি বাস্তবায়ন ও তা কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করার এবং ভারত মহাসাগর এলাকায় সামরিক ঘাঁটি ও ভারত মহাসাগরকে শান্তি এলাকা ঘোষণার দাবি সমর্থনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, নয়া বিশ্বযুদ্ধের হুমকি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক সংঘর্ষ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

দৈনিক বাংলা, ২ নভেম্বর ১৯৭৩

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আঁদ্রে ফোমিনের সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আঁদ্রে ফোমিন এইদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাসস এ খবর জানায়। তবে তাদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়েছে সাংবাদিকদের তা জানানো হয়নি।

মার্কিন নৌবহর অনুপ্রবেশ নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির প্রতিক্রিয়া

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ভারত মহাসাগরকে একটি শান্তি এলাকায় পরিণত করার ব্যাপারে সরকারের নীতির পুনরুল্লেখ করেন। ঢাকা থেকে বাসসের খবরে জানায় যায়, ভারতের বিদেশমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মার্কিন উপস্থিতি ভারত মহাসাগরকে বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতিদ্বন্দ্বী করতে পারে। এ মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এলাকাটিকে শান্তি এলাকা হিসেবে দেখতে চায়। ভারত মহাসাগরে মার্কিন নৌবহরের উপস্থিতি সংক্রান্ত খবর শ্রীলংকা সরকার পরীক্ষা করে দেখছিল। শ্রীলংকার পররাষ্ট্র দফতর এ সম্পর্কে আর কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

ভারত মহাসাগরে মার্কিন নৌবহরের চলাচল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, এতেই প্রমাণ হয় যে ভারত মহাসাগরকে শান্তি এলাকায় পরিণত করার প্রয়োজনীয়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই বাংলাদেশ সরকার এ নীতি অনুসরণ করে আসছে।

প্রসঙ্গত, অটোয়ায় কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন, আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, এমনকি জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন যে, ভারত মহাসাগর শান্তি এলাকা হওয়া উচিত। মার্কিন নৌবহরের পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে শরণ সিং বলেন, একটি বৃহৎ শক্তির নৌবহরের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই অপর বৃহৎ শক্তিগুলোর নৌবহর টেনে আনবে।

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির নতুন অধ্যায়

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির দুটো টেপের কোনও অস্তিত্বই নেই বলে এই দিন প্রকাশ পায়। টেপ দুটো নেই এ কথা জানান প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা। অস্তিত্ব না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি রিপাবলিকান দলীয় নিক্সনের সমর্থকরাও এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

টেপ ‍দুটোর অস্তিত্ব না থাকার খবরে আগে থেকেই সংশয়প্রবণ মার্কিন জনগণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হবে সে সম্পর্কে হোয়াইট হাউজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।