খাদ্যে অবৈধ মজুত ঠেকাতে বঙ্গবন্ধু সরকারের উদ্যোগ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বরের ঘটনা।)

 

ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু। সরকার ১৯৭৩ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সারাদেশে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে যখন ফসলের মৌসুম থাকে না তখন জনসাধারণের মধ্যে সমবণ্টন করার এবং বিশেষভাবে চোরাকারবারি ও মজুতদারদের হাতে ধান-চাল চলে যাওয়া রোধে সরকার এই সংগ্রহ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী ফনী মজুমদার জানান।

এই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক মহকুমায় কমিটি গঠন করা হবে। মহকুমা অফিসার ও ফুড কন্ট্রোলার হবে যথাক্রমে কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক।

স্থানীয় এমপি কাজ করবেন উপদেষ্টা হিসেবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক যে কোনও ব্যক্তিকে নেওয়া যেতে পারে। সহায়তা করার জন্য থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শাখা-কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খাদ্যমন্ত্রী জানান, ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমন এবং ইরি-২০ চাল ৩ থেকে ৪ লাখ টন সংগ্রহ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে চাষীদের ধান-চাল বিক্রয়ে উৎসাহিত করার জন্য সন্তোষজনক মূল্য দেওয়া হবে। এ মূল্য এখনও স্থির করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ওই মূল্য বাজারদরের কাছাকাছি হবে।

দৈনিক বাংলা, ৪ নভেম্বর ১৯৭৩

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের চার নেতা এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলের সঙ্গে সচিবালয় বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় একঘণ্টা দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বলে মুখপাত্র জানান। যে চার নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা হচ্ছেন গণ জোটের আহ্বায়ক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, মোজাফফর ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য এবং কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড ফরহাদ। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সমাজবিরোধী, চোর-ডাকাত ও দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করার ব্যাপারে জনমত গঠন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং চোর-ডাকাত ও সমাজবিরোধীদের অভিযানে কীভাবে সরকারের সঙ্গে সাহায্য সহযোগিতা করা যায় এবং কীভাবে একটি সমন্বয় সাধন করা যায় সে সম্পর্কে প্রতিনিধিদলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি আলোচনা করেন।

ডেইলি অবজারভার, ৪ নভেম্বর ১৯৭৩

সমবায় আন্দোলন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে

তথ্য ও বেতার দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ‘একমুঠো ধান বাংলার প্রাণ’ এই উপলব্ধি করে সমবায় আন্দোলনকে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি কৃষির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কৃষক সমাজকে এই সমবায় আন্দোলনের এককভাবে অংশ নিতে হবে । জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় সভাপতির ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি। উল্লেখযোগ্য যে, এদিন জাতীয় সমবায় দিবস ছিল।

তাহেরউদ্দিন ঠাকুর তার ভাষণে বলেন, এ দেশের কৃষকরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে রোদ-বৃষ্টি ঝড়-ঝঞ্ঝা, পোকার আক্রমণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। দেশের মোট উৎপাদনের শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক সমাজ উৎপাদন করে থাকেন আর কারখানার শ্রমিকরা বাকি ১০ ভাগ উৎপাদন করেন। তিনি সমবায় আন্দোলনকে সফল করার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন এবং সমবায় প্রকৃতি এবং ক্ষতি মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সমবায় কর্মীদের মানসিকতার পরিবর্তন করারও আহ্বান জানান।