বদলেছে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক, প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ আগামী বছর

২০০১ সালে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সহযোগিতা-চুক্তির বিষয়বস্তু ছিল অর্থনৈতিক, উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবাধিকার ও সুশাসন সংক্রান্ত। সম্পর্কটা ছিল অনেকটা দাতা-গ্রহিতার। গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে ইইউ’র বিভিন্ন মন্তব্য শুনতে হতো বাংলাদেশকে। ভূ-রাজনীতি বা নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিলই না বলতে গেলে। ২০ বছরে বদলেছে অনেক কিছু। জোটটি এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো জটিল ভূ-রাজনীতি নিয়েও আলাপ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতেও আগ্রহী ইইউ।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ২৭ অক্টোবর বৈঠক করেন ইইউ’র দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা। তিনি এক টুইটে বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকসহ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। পারস্পরিক রাজনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছি। ২০২২ সালে ইইউ-বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংলাপের প্রথম বৈঠকের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।’

ঢাকা ও ব্রাসেলসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক রূপান্তরের যে উদ্যোগ চলমান ছিল সেটাকে বেগবান করতে দু’পক্ষ আগ্রহী। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ইইউ’র যে আগ্রহ সেটাকে কাজে লাগাতে চায় এই অঞ্চলের বৃহৎ অর্থনীতির বাংলাদেশ।

ইইউ’র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগ্যান্ড গুনারের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের প্রায় ছয় ঘণ্টা বৈঠক হয়। রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, অর্থনৈতিক ‍ও উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবাধিকারসহ অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে উভয়পক্ষ একমত এবং আগামী বছর প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে একটি সংলাপ হতে পারে।

 

সম্পর্কের রূপান্তর

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের রূপান্তর নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, আগে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতো উন্নয়ন ও সহযোগিতা নিয়ে। সেটার নেতৃত্ব দিতো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। পরে সম্পর্কের ব্যাপকতা বাড়ে এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, সচিব পর্যায়ে রাজনৈতিক সংলাপ এখনও অব্যাহত আছে।

সম্পর্কের রূপান্তর প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। তাই আলোচনার বিষয়বস্তুও বেড়েছে। আমরা সম্পর্ককে কৌশলগত স্তরে নিতে চেয়েছিলাম, সে উদ্যোগ এখনও অব্যহত আছে।

আগামী বছরে শুরু হতে চলা ইইউ-বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংলাপে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, এটা নির্ভর করবে সংলাপের কাঠামোর ওপর। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে যেকোনও বিষয় নিয়েই আলোচনা সম্ভব।

 

ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতা

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্র বা কোয়াডের অন্যান্য সদস্যদের চেয়ে ভিন্ন বলে জানান শহীদুল হক।

তিনি বলেন, চীন-বিরোধী নীতি গ্রহণ করেনি ইইউ। তাদের আইপিএস কৌশলে যেসব বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি বিষয়ে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইইউ যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে সমুদ্র সহযোগিতা, সমুদ্র নিরাপত্তা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা। তিনি বলেন, সামরিক বিষয় ছাড়া প্রায় সব বিষয় নিয়েই ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা করতে পারে বাংলাদেশ।

ইইউ নিজেদের একটি বাহিনী তৈরি করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ইইউ’র কমন সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স পলিসিতে (সিএসডিপি) ইন্দো-প্যাসিফিকে তাদের নৌবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধির অভিপ্রায়ের বিষয়টি আছে।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ইইউ’র ২৭টি দেশের মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ আরও কয়েকটি দেশ অত্যন্ত প্রভাশালী এবং তারা ইইউ’র পলিসি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের প্রায় প্রত্যেকে বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে চায়।

তিনি বলেন, ওই দেশগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা আলোচনার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না ইইউ।