ঘূর্ণিঝড় ১৯৭৩: মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর সুপরিকল্পনা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালে ঘূর্ণিঝড় যখন আঘাত হানবে হানবে করছে সেই ‍মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এদিন গণভবন থেকে কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনায় সরকারি কর্মচারী ও পুলিশ অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত মহাবিপদ সংক্রান্ত খবর উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণের নিকট পৌঁছে দিতে হবে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করতে হবে। তিনি দুর্গত এলাকা থেকে জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং দ্রুত যেন ভুক্তভোগীদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় সেদিকে নজর দিতে বলেন। সামগ্রিকভাবে এই সংক্রান্ত প্রতিমুহূর্তের খবর সঙ্গে সঙ্গেই জনসাধারণের নিকট পৌঁছাতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বেতারের ট্রান্সমিশনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন।

তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিরতির পর সম্ভাব্য মহাদুর্যোগের খবরাখবর রাত ১টা পর্যন্ত প্রচার করতে হবে। মহাদুর্যোগের পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্ধারণের সুবিধার্থে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সচিবালয় খোলা রাখা হয় এবং বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির বাসায় সামনে ওয়াকিটকি নিয়ে বসেছিলেন। তাঁকে সম্ভাব্য মহাদুর্যোগের দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থার কথা খানিক পরপর অবহিত করা হয়।

দৈনিক বাংলা, ৮ নভেম্বর ১৯৭৩

ঝড় জলোচ্ছ্বাস আক্রমণের শঙ্কা

ঘূর্ণিঝড়টি যেকোনও সময় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে এবং ২০ থেকে ২৮ ফুট উঁচু হয়ে মারাত্মক জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা ও অদূরবর্তী দ্বীপগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলা হয়। এদিন রাত ১২টায় রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও চালনা বন্দরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানোর নির্দেশ ছিল। সারা দিনরাত ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপগুলোতে প্রবলভাবে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়, হারিকেনের রূপ নিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় আরও তীব্র হয়ে আঘাত হানতে পারে। সরকারিভাবে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানানো হয়।

ডেইলি অবজারভার, ৮ নভেম্বর ১৯৭৩

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সদরুদ্দিনের সাক্ষাৎ

জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান দিল্লিচুক্তির অধীনে বিনিময় কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনার জন্য একদিনের সফরে এদিন করাচি থেকে ঢাকায় পৌঁছান। বাসস খবর দিয়েছে, সদরুদ্দিন বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে গণভবনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিমানযোগে লোক বিনিময়ের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি সম্যক অবহিত রয়েছেন। লোকবিনিময় সন্তোষজনকভাবে অব্যাহত দেখতে উৎসুক তিনি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে এবং লোকবিনিময়ও সন্তোষজনকভাবে অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালিদের পুনর্বাসনের বিষয়টি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাকসন দেখছেন।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তিনি আলোচনায় মিলিত হন। পরদিনই ঢাকা ত্যাগ করার কথা তার। উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনার পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিমুখী যুদ্ধবন্দি উন্নয়ন কাজ নিয়ে আলোচনার জন্য ৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সফর করবেন বলে জানান।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ নভেম্বর ১৯৭৩

মিসর-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত

এদিন বিবিসির খবরে প্রকাশ—মিসরের প্রেসিডেন্ট সাদাত দীর্ঘ সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে তিনি ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দীর্ঘ আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ পূর্বাপেক্ষা সুগম হবে বলে বিভিন্ন মহল মত প্রকাশ করে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে—১৯৬৭ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মিসর।