বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি দেখতে সফরে মুখ্যসচিব

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১০ নভেম্বরের ঘটনা।)

রাঙ্গুনিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফর করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ্যসচিব। ১৯৭৩ সালের এদিন কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে অত্যধিক পানি ছাড়ার ফলে রাঙ্গুনিয়া থানার অন্তর্গত ও আশপাশের এলাকার একরের পর একর জমি নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার খবর আসে। সেখানে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার খবরও পাওয়া যায়।

রাঙ্গুনিয়া থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি ক্ষতির হিসাব প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তার মুখ্যসচিব রুহুল কুদ্দুস কাপ্তাই এলাকা সফর করে সরেজমিন বন্যা পরিস্থিতি যাচাই এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট রিপোর্ট পেশ করেন।

চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফর শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ১০ হাজার একর জমির বিভিন্ন জাতের উচ্চফলনশীল ধান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ সাহায্যের আশ্বাস দেন।

বঙ্গবন্ধু ১১ নভেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বলে আগের দিনের পত্রিকাগুলো জানায়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে চলা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে বলে জানানো হয়।

 

১০ লক্ষ জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা

সর্বমোট ৮৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৮০ একর জমির মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ৬২ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৫০ একর। এরমধ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ একর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধানের চাষ হয়। প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র উত্তরাঞ্চলে ২০ লক্ষ একর জমির রবিশস্য চাষাবাদের জন্য থেকে যায় এবং প্রায় ২০ লক্ষ একর জমিতে চাষাবাদ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে হালের বলদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য ১০ লক্ষ একরের বেশি জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কা করা হয়। অথচ, গবেষকরা মনে করেছিলেন উপর্যুপরি বন্যার কারণে আউশ ও আমন ধানের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, রবিশস্য চাষাবাদে তা পূরণ হবে।

 

মিসর-ইসরায়েল চুক্তি

জাতিসংঘের জনৈক মুখপাত্র এদিন ঘোষণা করেন, গ্রিনিচ সময় বেলা একটায় মিসর-ইসরায়েল ৬ দফা শান্তি পরিকল্পনা স্বাক্ষর হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তিচুক্তির উদ্যোক্তা। চুক্তি স্বাক্ষর হবে জাতিসংঘ বাহিনীর সেনাপক্ষের উপস্থিতিতে। আগের দিন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই স্বাক্ষরে তারা আরেক দিন সময় নিতে চায়। তারা জানায় যুদ্ধবিরতি জোরদার করার উদ্দেশ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনেক বিষয় পরিষ্কার করে নিতে হবে। ইসরায়েলের এমন অবস্থানে পর্যবেক্ষক মহল বিস্ময় প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তিচুক্তির উদ্যোক্তা হওয়ার পরও ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র ঘোষণা করেন, তারা চুক্তি স্বাক্ষরে নীতিগতভাবে রাজি। তবে কয়েকটি ব্যাপার স্পষ্ট হওয়া বাকি।

যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে নয়া কার্যক্রম প্রণয়ন

১৯৭৩ সালে ঢাকায় ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক সমাপ্ত হয়। তিন দিনব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও সেগুলোর সমাধানে পরবর্তী কাজের সময় ও পরিকল্পনা নির্ধারণ হয়। বৈঠকে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও সেগুলো অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান আব্বাস, সদস্যবৃন্দ শফিকুল হক, নাগ রাজাসহ অনেকে।

যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে সমাপ্তি দিবসে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে ভারত ও বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাজের সমন্বয় সঠিকভাবেই এগোচ্ছে।