ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে নির্বাচনি সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়: সিইসি

ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে নির্বাচনি সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে আপনাদের এটা বুঝতে হবে।

বুধবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, ঘরে-ঘরে, মহল্লায়-মহল্লায় পুলিশ পাহারা দিয়ে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থামানো যায় না। এসব ঘটনা এভাবে ঠিক পাহারা দিয়ে ঠেকানো যায় না। এটাই বাস্তবতা। দেশের নাগরিক হিসেবে আপনাদের এটা বুঝতে হবে। এটা থামানোর একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সহনশীলতা। নির্বাচনসুলভ আচরণ করা।

তাৎক্ষণিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে চলে চাই। ঘটনা প্রত্যক্ষ করি ও নির্দেশনা দেই। যথাযথ পরামর্শ দেই। যখনই সুযোগ পাই, গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্বুদ্ধ করি।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় সেটা ঠিকই। কিন্তু এ কারণে সহিংস ঘটনা হয় সেটা খুবই খারাপ। এটা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। এসব ঘটনায় অনেক জীবন চলে গেলে এটা কারও কাম্য হতে পারে না। আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দেবো যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন তাদের ওপর। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী, সমর্থক এবং জনগণ, এদের মধ্যে সহনশীলতা থাকতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবাই কাছের লোক, আত্মীয়-স্বজন।

নির্বাচনে প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয় উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যেসব বাহিনী আছে সেটা অনেক বেশি। বিজিবি থেকে শুরু করে র‌্যাব পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬-৭ জন অস্ত্রধারীসহ ২২ জন ফোর্স নিয়োজিত থাকে। এই যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে সেগুলো তো নির্বাচনের আগের ঘটনা। নির্বাচন যখন হয় প্রচার-প্রচারণা থাকে, তখন কোন মুহূর্তে কীভাবে তারা হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে একটি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তার জন্য তো কেউ প্রস্তুত থাকে না। এগুলো সবই ফৌজদারি অপরাধ। এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন সেগুলো দেখছে।

নির্বাচনে মৃত্যু ও সহিংসতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনাগুলো তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজান্তে ঘটে। তাদের অনুপস্থিতিতে ঘটে। এত বড় একটা নির্বাচনযজ্ঞ। যেখানে হাজার হাজার লাখ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে একেকটি ধাপে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র উপায় হলো যারা ভোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সহনশীলতা। এটার দায়দায়িত্ব প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দিলে হবে না। এরাই যে দায়ী, এটা বলার কোনও সুযোগ নেই। অনেক ঘটনা ঘটে একেবারে এলাকাভিত্তিক। কাজী বংশ, খান বংশ অথবা চৌধুরী বংশ, তালুকদার বংশ- এরকম হয়। রাস্তার এপার-ওপার এরকম হয়। দলীয় কোন্দলে হয়। পূর্ব শত্রুতার কারণে হয়। কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমরা যা দেখেছি, সেখানে প্রত্যেকেই বলেছেন স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুরনো শত্রুতার জের ধরে ঘটে। আমরা তাদের অনুরোধ করি, এই পরিস্থিতি যাতে তারা সৃষ্টি না করে। আর যেটা ঘটে যায় তার জন্য তো ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ই।

ঘটনার দায় কমিশন এড়াতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দায়-দায়িত্ব কাকে দেবো এখন? আমার মনে হয়, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তারা সহনশীল থাকলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দরকার হয় না। এত তৎপরতার দরকার হয় না।

এ বিষয়ে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু গুপ্তহত্যা হয়েছে। মেহেরপুরে যে ঘটনা সেটা গুপ্তহত্যা। নির্বাচনের জন্য যে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে এই গুপ্তহত্যা থামানো তাদের জন্য বেশ কষ্টকর। তারপরও তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছি। বিষয়টি আমরা মনিটর করছি। নির্বাচন ছাড়াও অস্ত্রের ব্যবহার বাংলাদেশে হয়। নির্বাচনের তফসিল যখন ছিল না তখনও কিন্তু আমাদের দেশে বহু লোককে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের গুপ্তহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। এটা যাতে না হয়, এজন্য আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। শক্ত বার্তা দিচ্ছি। প্রশাসনও বার্তা দিচ্ছে।