সমাজবিরোধীদের উৎপাটনের আহ্বান বঙ্গবন্ধুর

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১১ নভেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি করার কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী চক্র ও তাদের দালালরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারের জাতীয়করণ কর্মসূচি তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। গুপ্তহত্যা, ডাকাতি, কালোবাজারি ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত এ সকল পরগাছাকে সমূলে উৎপাটন করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, এর জন্য জাতীয়করণ করা ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, সমাজতন্ত্রের উত্তরণের পথে প্রয়োজনবোধে আরও রক্ত দিতে হলে বা চিলির মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও এদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এদিন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ছাত্র ইউনিয়নের হাজার হাজার সদস্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

শেরে বাংলার জীবনী ও কার্যাবলির ওপর গবেষণার আহ্বান

বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এদিন এক বাণীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিকায় শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কার্যাবলী এবং তার জীবনের ওপর গবেষণার আহ্বান জানান। শেরে বাংলার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভার জন্য বঙ্গবন্ধু সন্তোষ প্রকাশ করেন। উক্ত বার্তায় তিনি শেরে বাংলাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশের নবজাগরণের অগ্রদূত বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিকায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনের ওপর গবেষণা করার সময় এসেছে।

আলোচনা সভার সাফল্য কামনা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আলোচনা সভার আয়োজন সঠিক পদক্ষেপ। অন্যদের মধ্যে সভার সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠান শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবুল ফজল।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ নভেম্বর ১৯৭৩

বিপ্লব সাধনে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কৃষি সাহায্য ও পুনর্বাসন এবং তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির জন্য কার্যকর এবং সক্রিয় সহযোগিতা দরকার বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ স্থাপন করাই এই নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য। উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করতে বাংলাদেশ বেতারে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা ৩৫ মিনিটে একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচারের কথা জানানো হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা ওই অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে শুনবেন এবং নির্দেশাবলী পালন করবেন। তারা কৃষকদের এ অনুষ্ঠান শোনার জন্য উৎসাহিত করবেন এবং স্থানীয় বেতারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার যাতে করা যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। কৃষি উৎপাদন যাতে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয় সেজন্য সরকার কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় একটি কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় মহাকুমা পর্যায়ে অবস্থিত চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় করবে বলে জানানো হয়।