রায় নয়, ফৌজদারি মামলায় সময় বেঁধে দেওয়ার পর্যবেক্ষণের কারণেই বিচারককে সরাতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এই চিঠি দিয়েছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে একটি বিল বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে আইনমন্ত্রী এভাবে চিঠি দিতে পারেন কিনা—জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী তা জানতে চান।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বিচারিক রায়ের ব্যাপারে কথা বলিনি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি উনি বিচার যা করেছেন, রায় যা দিয়েছেন, সেটা উনার ব্যাপার। আপিলে সিদ্ধান্ত হবে। আমার আপত্তিটা হলো—উনি বলেছেন কোনও ধর্ষণ মামলা ৭২ ঘণ্টা পর নেওয়া যাবে না।
মন্ত্রী যোগ করেন “ফৌজদারি মামলার নীতি হচ্ছে এটাকে সময় দ্বারা বাধিত করা যাবে না। সেটা হলে ২১ বছর পরে জাতির পিতার হত্যার বিচার করা যেত না। ওই হত্যার পর তো কোনও এফআইআর গ্রহণ করা হয়নি। ওই মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী লালবাগ থানায় গেলেও মামলা নেয়নি। পুলিশ বলেছিল, ‘ব্যাটা তুইও মরবি আমাদেরও মারবি, এখান থেকে যা।’ সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরে ইনডেমনিটি আদেশ বাতিলের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল। সময় দ্বারা বাধিত হয় না বলেই ওই বিচার সম্ভব হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি কাকে সরাবেন কাকে রাখবেন সেটার সাজেশন আমি করতে পারি না, সেটা করিনি। বিচার বিভাগের গার্ডিয়ান প্রধান বিচারপতির কাছে আমি ওই (৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ) ব্যাপারটি দেখতে বলেছি।’
শামীম হায়দার তার বক্তব্যে বিচারককে সরানোর চিঠিতে বিচার বিভাগের ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করে বলেন, কোনও মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার আগে এভাবে বিচারককে সরানোর চিঠি আইনমন্ত্রী দিতে পারেন কিনা। তিনি বলেন, ‘যতদূর বুঝি রায় তো লেখা হওয়ার কথা নয়। হয়তো পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, “একজন আইনমন্ত্রী যদি এভাবে বিচারক সরাতে অনুরোধ করেন সেটা তখন অনুরোধ থাকে না। এটা ‘পেছনের দরজা’র নির্বাহী আদেশ হয়ে যায়। এ ধরনের ‘আদেশ’ বিচার ব্যবস্থার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে। বিচারক বদলি হচ্ছে। তিন জন বিচারপতিকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল ও ডিমোরালাইজড করার চেষ্টা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার পর মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দিয়ে রায় দেওয়া ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা রবিবার (১৪ নভেম্বর) সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে আদালতে না বসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়।
এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা ‘সিজ’ করতে প্রধান বিচারপতিতে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।