তিয়াত্তরের ১৬ ডিসেম্বর: পালন হবে ‘জাতীয় দিবস’

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৯ নভেম্বরের ঘটনা।)

 

১৯৭৩ সালের এই দিনে জানানো হয়, এখন থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হবে। বিশ্বের সকল দেশেই কোনও একটি নির্দিষ্ট দিনকে জাতীয় দিবস পালন করা হয়। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দিনটিকেই নির্ধারণের কথা জানানো হয়।

উল্লেখযোগ্য যে, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করে এবং দেশ শত্রুমুক্ত হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান কার্যকর হয় এবং জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়।

 

স্বাধীন দেশে নিয়মের ঘেরাটোপে ৮৪ জন অফিসার

৮৪ জন অফিসার বাংলাদেশের কোনও চাকরি পাবে না। বাংলাদেশ সরকারের ১৯৭২ সালের (চাকরি) আদেশের ৫ নং ধারা মোতাবেক (রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ৯ নম্বর আদেশ) সরকার জানায় যে, পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরিরত নিম্নলিখিত ৮৪ জন অফিসার কখনোই বাংলাদেশের চাকরিতে ছিলেন না। এখনও নাই এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা চাকরি অথবা অন্য কোনও দাবি জানাতে পারবেন না। এই দিন এক সরকারি হ্যান্ডআউটে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়। ৮৪ জনের মধ্যে সৈয়দ শাহনুর রহমান, হামিদুর রহমান চেয়ারম্যান, রশিদ, পাকিস্তান সরকারের নার্সিং উপদেষ্টা কানিজ মওলা ছিলেন।

দৈনিক বাংলা, ৩০ নভেম্বর ১৯৭৩

সেই ডিসেম্বরে শ্রমনীতি ঘোষণা

১৯৭৩ সালের এই দিনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রমনীতি ঘোষণা করা হবে। দেশের প্রচলিত শাসনতন্ত্র শিল্পনীতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শ্রমনীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে টঙ্গী জাতীয় শ্রমিক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে উৎপাদন বৃদ্ধি। নতুন শ্রমনীতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, যে শ্রমিক বেশি উৎপাদন করবে, সেই অনুপাতে তার বেতন নির্ধারণ করা হবে। যে উৎপাদন ব্যাহত করবে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জহুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকার শিল্প-কারখানায় যারা ষড়যন্ত্রমূলক কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই বাস্তব পদক্ষেপ নেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আদমজী জুট মিলের কথা উল্লেখ করেন।

 

ইন্দিরা ও ব্রেজনেভের স্বাক্ষর

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ব্রেজনেভ এক যুক্ত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেন। তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

অপরদিকে ভারতের পরিকল্পনামন্ত্রী ডিপি ধর ও সোভিয়েত উপ-প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই বাইবাকফের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। ভারতীয় সংসদের উভয় পরিষদের যৌথ সভার ভাষণে নিকোলাই বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণ বরাবরই ভারতীয় জনসাধারণের সংগ্রামে তাদের পাশে ছিল, আন্তরিকভাবে তাদের সমর্থন দান করেছে ও তাদের সাফল্যে আনন্দিত হয়েছে।

ডেইলি অবজারভার, ৩০ নভেম্বর ১৯৭৩

তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আদমজী জুট মিলের স্বাভাবিক কাজ শুরু হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী আকস্মিকভাবে পাটকলটি পরিদর্শনে যান এবং মিলের জেনারেল ম্যানেজারকে অপসারণ ও চারজনকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন। এরপর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। তদন্ত কাজ শেষ করে রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে বলা হয়। এরপর যেকোনও কার্য দিবসে বঙ্গবন্ধুর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।