বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় তিয়াত্তরে জাতীয় দিবস পালনে ব্যাপক আয়োজন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ ডিসেম্বরের ঘটনা।)

 

১৯৭৩ সালে জাতীয় দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়। সারা দেশে মহান জাতীয় দিবস উদযাপিত হবে। এই দিন ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলের সভাপতিত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ওই বছর জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মসূচির সমন্বয় সাধন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে গুরুত্বারোপ করা হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় সাফল্যের ওপর। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাতি যে সাফল্য অর্জন করেছে তার ওপর। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহসহ আরও অনেক নেতাকর্মী। জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশ বেতারে জাতীয় অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলেও জানানো হয়।

দৈনিক বাংলা, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭৩

সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ শুরু

হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম সরকারের প্রধান গভর্নর আব্দুল মালেক এই দিনে মুক্তি পান। তার সঙ্গে তারই মন্ত্রিসভার তিন সদস্যসহ ৮ ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনও ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাম্প্রতিক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তি পান তারা। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর ১৬ জনকে এক কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেবছর ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও বহু ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এদের অধিকাংশই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

ডেইলি অবজারভার, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭৩

সোহরাওয়ার্দীর মহান আদর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণের আহ্বান

এদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দশম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লোক মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকাল সাতটায় পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং সুরা ফাতেহা পাঠ করেন। তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ও অন্য নেতারা ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু এরপর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দিনের মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার মাহমুদুল্লাহ ও মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতারা মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে মরহুম নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সেদিন বিকালে মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনাসভা হয়। শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সমাজ জীবনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব বলে আলোচকরা তাদের বক্তৃতায় বলেন।

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু বাণী দেন। যেখানে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সাধক এ মহামানব যে শাশ্বত মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন সেই মূল্যবোধকে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠা করার সার্বিক প্রয়াস আমাদের গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী আজীবন সংগ্রাম করেছেন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, বাংলার মানুষের ওপর সোহরাওয়ার্দীর অসীম আস্থা ছিল। তিনি তাদের ভালোবাসতেন প্রাণের চাইতেও বেশি। বাংলা গণ-মানুষের অধিকার নিয়ে তিনি কোনোদিন আপস করেননি।

আলোচনাসভায় সোহরাওয়ার্দীর আদর্শ অনুযায়ী আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আইনের শাসনের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় অনুরাগ। রাষ্ট্রনায়কদের অভ্যর্থনা জানাতে বিচারপতিদের বিমানবন্দরে যাওয়ার ব্যবস্থা পাকিস্তান আমলে চালু হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হয়ে সে ব্যবস্থা রদ করেছিলেন। আইনের শাসনের প্রতি তার মর্যাদাবোধের এটা প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অর্থমন্ত্রী বলেন, আইন মেনে চলার প্রবণতা আমাদের দেশে সৃষ্টি করতে হবে। সোহরাওয়ার্দীর জীবনে অসম্প্রদায়িক ও যুক্তিবাদী দিক সম্পর্কেও আলোচনা করেন তাজউদ্দীন।