দেশপ্রেমিকদের নির্বাচিত করতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১২ ডিসেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ইউনিয়ন কাউন্সিল ও পৌরসভাগুলোতে প্রকৃত সৎ, কর্মদক্ষ ব্যক্তিদের নির্বাচনে আসার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, কোনোরকম জোরজবরদস্তি অথবা প্রলোভন ছাড়া এই সব গুণাবলীর ভিত্তিতে ভোটদাতারা তাদের ভবিষ্যৎ নেতাদের নির্বাচিত করবেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর আসন্ন নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবেন তারা সর্বদা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের সেবা ও শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দুর্গতদের মুখে হাসি ফোটানোর একাগ্র লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাবেন।

বাসসের খবরে বলা হয়, এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি এ বিষয়ে তাঁর দৃঢ় আস্থা আছে যে তাদের নির্বাচন হবে নিখুঁত। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে গ্রামবাংলা ও শহরে-নগরে গণতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থার সত্যিকারের ভিত্তি। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা হবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । তাই এ নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পটভূমিতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচনে গ্রাম-গ্রামান্তরে, শহরে-নগরে যারা নির্বাচিত হবেন বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখার সুযোগ তাদেরই থাকবে।

আদর্শ যোগ্য ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচিত হতে পারেন, সেটার প্রতি খেয়াল রাখা সকল ভোটদাতার অপরিহার্য কর্তব্য বলে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নিজ নিজ এলাকার ভোটাররা খুব ভালোভাবেই জানেন, কে বা কারা তাদের অঞ্চলের সবচেয়ে সৎ, আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক। ভোটদাতারা এসকল গুণাবলীর বিচারে তাদের আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করবেন। এ বিশ্বাস বাংলাদেশের মানুষের ওপর আছে।’

দৈনিক বাংলা, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭৩

স্বাধীনতার শত্রুদের রুখে দেওয়ার শপথ নিয়ে জাতীয় দিবস শুরু

তৃতীয় জাতীয় দিবসের পাঁচদিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয় এই দিন। গণ ঐক্যজোট নেতারা সমাজতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধী সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবসের সকল কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এই দিন বিকালে বায়তুল মোকাররমে জাতীয় দিবস উপলক্ষে গৃহীত পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আয়োজিত গণসমাবেশে বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে ৩০ লাখ তাজা প্রাণ আত্মহুতি দিয়েছে তাদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন সম্ভব অর্জিত স্বাধীনতা সুসংহত করা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

তারা বলেন, যারা ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবসের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য নষ্ট করে এই দিবসের আনুষ্ঠানিকতা বানচাল করতে চায় তারা স্বাধীনতার দুশমন। ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের প্রতি তাদের কোনও শ্রদ্ধা নেই।

ডেইলি অবজারভার, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭৩

দুর্গত এলাকা সফরে যাবেন বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপদ্রুত কয়েকটি দুর্গত এলাকার অবস্থা নিজের চোখে দেখে আসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করবেন। বাসসের খবরে বলা হয়, দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বরগুনা যাবেন। সেখান থেকে খেপুপাড়া, চর কুকরিমুকরি ও চরফ্যাশনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে যাচ্ছেন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী শাহজাদা আব্দুল মালেক খান ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রী আবদুল মমিন।