বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমাকে বছরের মহোত্তম কাজ ঘোষণা গার্ডিয়ানের

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪  ডিসেম্বরের ঘটনা।)

 

১৯৭৩ সালের এ দিন গার্ডিয়ান পত্রিকার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিবন্ধকার, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাংবাদিক পিটার প্রেস্টন এক নিবন্ধ লেখেন। বাংলাদেশ সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে ১৯৭৩ সালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর অন্যতম এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক বলে বর্ণনা করেন তিনি।

নিবন্ধে ১৯৭৩ সালের মহৎ কার্যাবলীর মধ্যে এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যাদের মুক্তি দেওয়া হলো, দু’বছর আগে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। তিনি লেখেন, এরা সব কারাগারে ছিল আর অপেক্ষা করছিল শাস্তির। কিন্তু এখন ক্ষমা ও ভুলে যাওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।

বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পৃথিবীর অন্যত্র যখন বিরোধী মতাদর্শ এবং দলগুলোর ওপর রাজনৈতিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে সে সময় ব্যাপক ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টিতে এখানকার কূটনৈতিক মহল আনন্দ মিশ্রিত বিস্ময় প্রকাশ করেন। যে কোনও দেশের সাধারণ আইনে যারা দণ্ডযোগ্য, তাদের মুক্তিদানের ফলে এটাই আবার প্রমাণিত যে বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা। যার প্রতি জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এমন একজন ব্যক্তির মহানুভবতার প্রশংসা করেছেন পশ্চিমের রাজনৈতিক ও অন্যান্য মহল। বাংলাদেশ সরকারের প্রসংসা করে বঙ্গবন্ধুর কাছে পাঠানো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর এক বাণীতে বলা হয়, মহানুভবতার প্রতীক এশিয়ার একজন মহান নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা বিশ্বের শান্তিকামী জনগণের কাছে আরও বেড়ে গেছে।

দৈনিক বাংলা, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩

জাতির বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন

বাংলাদেশের মানুষ এই দিন হৃদয়ের শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত বাংলাদেশের কৃতি সন্তানদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য নতুন করে আহ্বান জানানো হয় দেশবাসীকে শহীদদের আত্মাহুতি যেন বৃথা না যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে গণঐক্যজোট একটি আলোচনার আয়োজন করে রমনা পার্কের বটমূলে। বাংলা একাডেমি, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসহ আরও অনেক স্থানে সভা হয়। মহান জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলেও জানানো হয়।

 দৈনিক বাংলা, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩

বিদ্রোহ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছিল

বেলুচিস্তানে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। বিদ্রোহী তৎপরতা যতই বাড়ছে তার মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকারের কার্যক্রম ও কৌশলও সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছিল। বেলুচিস্তানের কোহাট মন্ত্রিসভার সদস্য ও জাতীয় পরিষদ সদস্যদের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ হয় এদিন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানানো হয়। নেতারা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত পাঠান-এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য বাড়িতে বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ তো হচ্ছে অন্যদিকে ভুট্টোর মনোনীত বেলুচিস্তান গভর্নর জেনারেল এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ডেইলি অবজারভার, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩

জাপান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট অবদান রাখবে। বিপিআইয়ের খবরে বলা হয়, এদিন ঢাকা পৌঁছানোর পর জাপানি প্রতিনিধি দলের নেতা হায়াকায়া বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন।

বাসসের খবরে প্রকাশ, জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মতির সভাপতি ও জাপানের পার্লামেন্টের বিশিষ্ট সদস্য আশা প্রকাশ করেন, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বাড়বে। চারদিনের সফরে ঢাকা পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন, গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফর গভীর ছাপ রেখেছে এবং এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে ও তার ব্যক্তিগত মেহমান হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি।