নিষেধাজ্ঞার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না সরকার

এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়তে চায় না সরকার। ক্রমাগত সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আগামী বছরের প্রথমভাগেই অন্তত তিনটি সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে সরকার। এরমধ্যে একটি বৈঠক এপ্রিলে হবে এবং বাকি দুটির তারিখ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি সংলাপ আছে। কোভিডের কারণে গত বছর একটি ছাড়া বাকি বৈঠকগুলো হয়নি। আমরা চাই বাকি বৈঠকগুলোও দ্রুত হোক।’

সংলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে পার্টনারশিপ ডায়ালগ, সিকিউরিটি ডায়ালগ, ডিফেন্স ডায়ালগ, টিকফা ও ইকোনমিক পার্টনারশিপ ডায়ালগ। ওই কর্মকর্তা বলেন, এপ্রিলে সিকিউরিটি ডায়ালগ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পার্টনারশিপ ডায়ালগ ও ইকোনমিক পার্টনারশিপ ডায়ালগও এপ্রিলের আগেই হবে আশা করা হচ্ছে।

আসন্ন পার্টনারশিপ ডায়ালগ এবার বাংলাদেশে হবে এবং সেটিতে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল আন্ডার-সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা আসার কথা রয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটি ডায়ালগ এবার ওয়াশিংটনে হবে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

সম্প্রতি র‍্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গে গত বছরের জুলাই মাসে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনও বৈদেশিক সহায়তা পাবে না। এর আগে থেকেই দুই দেশের একাধিক বৈঠকে র‌্যাবের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে একজন কূটনীতিক বলেন, র‌্যাব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব গত বছরের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞপ্তির পরেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞাটি হঠাৎ করে দেওয়া হলেও অবাক করার মতো ছিল না।

বাংলাদেশের অবস্থান

গত ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরের দিন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মৌখিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয় বিষয়টি সুরাহার জন্য।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে তিনজন মন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠকসহ আরও কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও বেশি আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বৈঠকগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানামুখী সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের এবং একটি ইস্যুর প্রভাব যেন অন্যগুলোর ওপর না পড়ে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে সরকার বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপের প্রভাব রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ায়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যেন অন্য দেশগুলোকে এ ধরনের কাজে উৎসাহিত না করে সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।

‌'সবদিক সামাল দিয়ে' ভারসাম্য নীতি গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও উন্নতি করতে হবে বলে তিনি জানান।