বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

শেরে বাংলা নগরের পুরোনো ঠিকানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে শুরু হলো ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২। শনিবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেন আপনাদের বাজার ঠিক রাখতে পারেন, আরো উন্নত করতে পারেন। সে দিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দিবেন। অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

‌‌তিনি বলেন, ‘সময় কিন্তু এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের; একথাটি মনে রাখতে হবে এবং সেই সুযোগটি আমাদের নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় রফতানি খাতের ভূমিকা অনেক বেশি। বিশেষ করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র বিমোচন এবং বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি। 

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রফতানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ১৩ বছরে আমরা অর্জন করেছি ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এই ব্যাপক উন্নতি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটা সুন্দর সমাজ, সুন্দর দেশ, উন্নত দেশ; যে দেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ; সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এ এইচ এম আহসান।

দেশের রফতানি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বৈচিত্রের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং অন্যান্য সহায়ক সংস্থা এই মেলার আয়োজন করছে বাণিজ্যমেলার নতুন এই ভেন্যুতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেলার নতুন ভেন্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা স্থায়ী মেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। (নতুন ভেন্যুতে) প্রথম আয়োজন করছেন, কিছু কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমি তো কাঠামো করে দিয়েছি, বাকিগুলো আপনারা ব্যবসায়ীরা সমাধান করে নেন। এই মেলার ফলে পণ্যের চাহিদা জানা ও সে আলোকে পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের আইডিয়া পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার (প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট) আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সামনে ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।

মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তা রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, শিশুদের জন্য ২০ টাকা।

প্রসঙ্গত, দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হচ্ছে।