ট্রলি সংকট কেটেছে, দুর্ভোগ কমাতে আরও উদ্যোগ শাহজালালে

নানা সংকটে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভোগান্তিতে পড়তে হতো যাত্রীদের। এর মধ্যে যাত্রীর মাথায় লাগেজের ছবি প্রকাশ হলে চাপে পড়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। রাতে ফ্লাইট বন্ধ হওয়াতেও বাড়ে ভোগান্তি। তৃতীয় টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এসব সংকটও পুরোপুরি কাটছে না। তবে দুর্ভোগ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কেটেছে ট্রলি সংকট।

শাহজালাল বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ। কিন্তু বছরে এক কোটিরও বেশি মানুষ বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। অবকাঠামোগত সমস্যা এবং যাত্রীর চাপ বাড়ায় ২০১৮ সালের দিকেই যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটির সক্ষমতা হারিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর। এজন্য বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করতে ৩য় টার্মিনাল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যা ব্যবহার উপযোগী হবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে।

যারা হেলথ ফরম পূরণ করতে পারছেন না, তাদের সহায়তা করছে এভসেক সদস্যরা

ট্রলি সংকটের কারণে গত ডিসেম্বরে বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভেতর যাত্রীদের লাগেজ মাথায় তুলতে দেখা যায়। বাংলা ট্রিবিউনে  এমন খবর প্রকাশের পর শুরু হয় সমালোচনা। এ নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর দুঃখ প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। একইসঙ্গে বিমানবন্দরের দুর্ভোগ কমাতে নির্দেশনাও দেন। তখন অস্থায়ী ভিত্তিতে ৭০ জন ট্রলিম্যান নিয়োগ, ট্রলি মেরামত ও নতুন ট্রলি কেনার উদ্যোগ নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

অন্যদিকে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের লাইনে যেন দাঁড়াতে না হয়, সে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

দীর্ঘ সময় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের লাইনে যেন দাঁড়াতে না হয়, সে ব্যবস্থা নিতেও মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়

করোনা মহামারির কারণে আকাশপথে যাতায়াতে বেড়েছে নানা বিধিনিষেধ। যে কারণে যাত্রার প্রায় ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসতে হয় যাত্রীদের। সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের আসতে হয় ৮ ঘণ্টা আগে। অনেকে যানজটের ভয়ে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২-৩ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে চলে আসছেন।

আবার প্রতিবছর শীতকালে তিন মাস রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ থাকে। এ বছর ৩য় টার্মিনাল প্রকল্পের কাজের জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে ৬ মাস। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদেশগামী কিংবা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ট্রলি নিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে না। হেলথ ডেস্কের সামনে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্যও প্রদান করছেন তারা। যারা হেলথ ফরম পূরণ করতে পারছেন না, তাদের সহায়তা করছে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সদস্যরা। মিনিট দশেকের মধ্যেই ইমিগ্রেশন শেষ করে দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন লাগেজ। তবে কখনও একই সময়ে একাধিক ফ্লাইটের চাপ বাড়লে অপেক্ষা কিছুটা বাড়ে।

কেটেছে ট্রলি সংকট

দুবাই থেকে এসেছেন রাশেদুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘উড়োজাহাজ থেকে নেমে বেল্ট পর্যন্ত আসতে ১৫ মিনিট লেগেছে।  ট্রলিও আছে। লাগেজও পেয়েছি দ্রুত। আমরা সব সময় এমন সেবাই চাই।’

প্রায় একই ভাষ্য সৌদি আরব থেকে আসা জিহাদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে নানা সমস্যার কথা শুনি। আজ আমাকে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। আমরা চাই আমাদের দেশের বিমানবন্দর উন্নত দেশের মতো উন্নত সেবা দিক।’

যাত্রীদের সুবিধার জন্য কাস্টমস জোনের জায়গা বরাদ্দ বাড়িয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কাস্টমস হাউস জানিয়েছে, আগে ২টি স্ক্যানার মেশিন ব্যবহার করা হলেও এখন ৪টি আছে। এতেও সময় বেঁচেছে অনেক।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাত্রীদের কষ্ট কমাতে। ইতোমধ্যে ট্রলি সংকট কেটেছে। যাত্রীদের যেন সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য মনিটরিং বেড়েছে।’

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের জন্য রাতে ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে দিনে যাত্রী ও স্বজনের চাপ বেড়েছে। দুমাস আগে আরও দুই হাজার ট্রলি কেনার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এগুলো আসতে সময় লাগবে। সাময়িক সংকট ছিল, যা এখন নেই।’

মো. মফিদুর রহমান আরও বলেন, ‘ইমিগ্রেশন, কাস্টমসে যেন যাত্রীদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়, এজন্য জনবল বাড়াতে বলা হয়েছে।’

 

ছবি: প্রতিবেদক