‘পৃথিবীর কোনও শক্তিধর রাষ্ট্রই এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে না’

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘পৃথিবীর যত শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন, তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার কোনও ক্ষমতা রাখে না। আমাদের সমস্যা থাকলে আমরা এই পার্লামেন্টে আলোচনা করবো। রাজপথে যাবো। আমরা সেখানে সেটার সমাধান করবো। নির্বাচন কমিশনে যাবো। রাষ্ট্রপতির কাছে যাবো।’

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদে দাবি করেন, গত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্মে বিএনপি-জামায়াত কত টাকা দিয়েছে সেই প্রমাণ তার কাছে আছে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে আমার কাছে প্রথম যে ডকুমেন্ট আছে, সেটি ২০১৫ সালে একিন কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে। বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। মাসিক ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এবং এটি তিন বছর অব্যাহত ছিল। বছরে ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরে প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার আসে। এ ধরনের ১০টি ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে।’ এ সময় সংসদে তিনি ডকুমেন্টগুলো দেখান।

এর আগে বিএনপির হারুনুর রশীদ বক্তব্য রাখেন। তিনি পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে সত্য কথা ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার দাবি জানান।

এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি (হারুন) বলেছেন, জানা সত্ত্বেও মিথ্যাকে গোপন করিও না। আমি দাবি করবো তার এই বক্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবনে পালন করছেন কিনা তা প্রমাণ করে দেখাবেন। নিজেকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে যদি দাবি করে থাকেন, তাহলে সেই মিথ্যাগুলো যেন গোপন না করে থাকেন। অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে এবং এই সংসদে ২০২২ সালের শীতকালীন অধিবেশনে, তার দলের প্রাক্তন ও বর্তমান নেতাদের কুকর্মগুলো যেন প্রকাশ করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো জানি বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে, তাহলে তিনি তার প্রার্থী, আমার এলাকা, এসব বলছেন কেন? তাহলে কী তিনি দল পাল্টেছেন? জাতীয়তাবাদী দল থেকে তিনি নতুন কোনও রাজনৈতিক দলের সূচনা করেছেন কিনা সেটা আমাদের জানতে হবে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বিএনপি নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিহার করেছে। আমি তো রাজশাহীতে দেখেছি প্রতিটি উপজেলাতেই বিএনপির প্রার্থী ছিল। তারপরও রাজশাহীর মতো জায়গায় আমার নির্বাচনি এলাকায় নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে ৬টি জায়গায়। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে দুটি জায়গায় এবং তাদের দলের একজন নির্বাচিত হয়েছেন। একটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। ইউপি নির্বাচনে রাজশাহীতে গত টার্মে তার (হারুন) কোনও অভিযোগ আছে কিনা এবং গত দুই-তিন সপ্তাহ আগে যে নির্বাচন হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে তাকে বলার জন্য অনুরোধ করবো।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজকে থেকে অনেক বছর আগে বলেছেন, আমরা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতে বিশ্বাস করি। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই আছে ইভিএম। ডিজিটাল বাংলাদেশের পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেই পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন এবং ইভিএমের মাধ্যমে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচন করা সম্ভব, সেটি মাহবুব তালুকদারের মতো নির্বাচন কমিশনারও কিন্তু গতকাল স্বীকার করেছেন।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমানকে এখনও কীভাবে তারা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন। একজন দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত দাগি পলাতক আসামি কীভাবে একটি দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়? পবিত্র কোরআনের আলোকে আমি তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে আর্টিকেল লিখেছিলেন। কিন্তু এটি প্রকাশ পাওয়ার পর বিএনপির সব নেতাকর্মী অস্বীকার করেছিল, এটা বিএনপির খালেদা জিয়ার লেখা নয়।’ হারুনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘অন্ততপক্ষে এখন সংসদে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআনের আলোকে সত্যটা বলেন। অন্ততপক্ষে আজকে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে তখন মিথ্যা বলেছিলাম, পবিত্র কোরআনের আলোকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি মহান আল্লাহর কাছে। বলেন, এই তথ্যটি তখন বিএনপি-জামায়াতের নেতারা মিথ্যা বলেছিল।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে তাদের হিসাব নিকাশ প্রকাশ করে। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে হবে এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে গেছে কিনা? তা না হলে এতিমের টাকা মেরে খেয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সেই টাকার ব্যবহার এখানে করা হয়েছে কিনা, আমরা সেই তদন্ত চাই। সেই উত্তর আমরা আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে কমিশনের কাছে জানতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করেছে। তখন আমরা একটি ব্যক্তির নাম শুনেছিলাম। মীর জাফর নাকি পলাশীর প্রান্তরে বাংলার সূর্যকে ডুবিয়ে দিয়েছিল বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। আবার আমরা সেই অপচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ঈদের পরে, ঈদের আগে, শীতের আগে, শীতের পরে আন্দোলনের ডাক হয়। অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। যে অবরোধ এখনও দেখা যায়নি। তারপর এটা থেকে ব্যর্থ হয়ে টাকা-পয়সার খেলা অব্যাহত চলতে থাকে। এটা বন্ধ হতে হবে। চিরতরে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বন্ধ হতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের বিচার করতে হবে। তারা বলেন, দেশনেত্রী কিন্তু আমি তো বলবো খালেদা জিয়া দেশবিরোধী ব্যক্তি এবং দেশদ্রোহিতার কারণে তার বিচার আবার পুনরায় হতে হবে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ আছেন। তার সুস্থতা কামনা করি। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ তিনি। বাংলাদেশের একটা বিষয় আছে, অসুস্থ মানুষের প্রতি কেন জানি দিল নরম হয়ে যায়। কিন্তু সেই মানুষটি গ্রেনেড হামলা করে আমার দলের অসুস্থ নেতাকর্মীকে সিএমএইচে যেতে দেয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে দেয়নি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে আমরা বলে দিয়েছি, বাংলাদেশে আর কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়ার সুযোগ নেই। এটা নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ করবেন না।’

সব কূটনীতিককে আইনমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনও কথা বলার সুযোগ নেই বলেও সংসদে উল্লেখ করেন তিনি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, আইন সংশোধন করে তাহলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে পারবে।’