বিতর্কিত নির্বাচন করতেই এই আইন করা হচ্ছে: সুজন

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে। কোনও আলাপ-আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নুরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগতদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করতেই অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে। সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনও বিধান নেই।

সুজন-এর উদ্যোগে প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নিয়ে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন-এর নির্বাহী সদস্য প্রফেসর সিকান্দর খান এবং শফিউদ্দিন আহমেদ, সুজন’র জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিশিষ্ট নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম, আর্টিকেল নাইনটিন-এর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের বিষয়টিই মূল বিষয়। খসড়ায় কমিটির কার্যাবলির স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নামের তালিকা প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধান রাখা হয়েছে। কমিটির নাম যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ করার লক্ষ্যে দুই ধাপে নামের তালিকা প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে। খসড়ায় যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে কমিটির সভার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী এবং সদস্যদের ভোট প্রদানের তথ্য লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণের বিধান। কোনও নাগরিক যদি কমিটির সভার কার্যবিবরণীর অনুলিপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তবে অনতিবিলম্বে তা প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হবে।

ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, আমাদের প্রস্তাব ছিল অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাখা। কারণ তার নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। কমিশনারদের কারও বিরুদ্ধে লিখিত-অলিখিত যে কোনও অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপারিশকৃত নামগুলো একটা পার্লামেন্টারি হিয়ারিং-এ যাবে, সেখানে আলাপ আলোচনা হবে। কাদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে সেটা প্রকাশ করতে হবে।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে দুটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। একটি হচ্ছে তিনি নিরপেক্ষ কিনা। দ্বিতীয়ত তার ভেতর আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস রয়েছে কিনা। নির্বাচনে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার পরও কমিশনাররা বলছেন আমাদের কোনও দায় নেই। এরকম ব্যক্তি এলে যেমন চলছে তেমনই চলবে। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী প্রধামন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।