দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়াই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স পায় সার্বিয়ায় যাওয়া ১৪ কর্মী!

চার মাস আগে মেসার্স নুরজাহান রিক্রুটিং এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে সার্বিয়ায় যান ১৪ বাংলাদেশি কর্মী। কিন্তু গিয়ে দেখেন সার্বিয়ান কোম্পানি ‘ভেকা প্লেনা’ বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ না পেয়ে হতাশায় পড়েন তারা। তাদের মধ্যে একজন মানিকগঞ্জের বাদল খন্দকার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পথেই মারা যান। ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস অনুসন্ধান করে জানতে পারে, সেই কোম্পানির কোনও সত্যায়ন দূতাবাস করেনি এবং তাদের কাছে সেই কোম্পানির কোনও তথ্যও নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার্বিয়ায় গত বছরের জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। ১২ জুন ভোরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রথম দফায় ৯ জনকে পাঠানো হয় সেদেশে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৭টি শর্তে নতুন এই দেশে ভিসা প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়।

সার্বিয়ায় পাঠানো কর্মীদের নিয়োগের অনুমতিপত্র থেকে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের শর্তে উল্লেখ আছে, চাকরিদাতা নিয়োগ অনুমতিপত্র দেওয়ার পর সার্বিয়ান নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যাচাই করে কাজের নিশ্চয়তা আছে কিনা তা ১৫ দিনের মধ্যে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রতিবেদন দিতে হবে। কিন্তু বাদল খন্দকারসহ ওই ১৪ জনের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে জানিয়েছে, সেই সার্বিয়ান কোম্পানি এবং রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে দূতাবাস থেকে কোনও সত্যায়ন প্রদান করা হয়নি। ফলে সেই কোম্পানির কোনও তথ্য দূতাবাসে নেই।

এখানে উল্লেখ্য, বিএমইটি স্মার্টকার্ড চূড়ান্তভাবে পেতে হলে রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা জব সিকার্স কার্ড, বৈধ পাসপোর্টের প্রথম ছয় পৃষ্ঠার ফটোকপি, দূতাবাস থেকে করা ভিসার সত্যায়িত কপি, দূতাবাস থেকে করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং বিএমইটি’র ব্রিফিংয়ের ছাড়পত্র লাগে।

মারা যাওয়া বাদল খন্দকারের সঙ্গে সার্বিয়া যাওয়া অন্য ১৩ জনেরও কেউ কাজ পায়নি বলে জানিয়েছেন সার্বিয়ায় অবস্থানরত তাদেরই একজন বিল্লাল আহমেদ। তিনি জানান, তারা ১৪ জন চার মাস আগে বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়ে সার্বিয়া যান। সেখানে পৌঁছে জানতে পারেন সেই কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, রিক্রুটিং এজেন্সিকে জানালে তারা অন্যখানে কাজ খুঁজে নিতে বলে। ২ মাস আগে তারা ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে চলে আসেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কাজ না পেয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

বাদল খন্দকারের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার সাথী জানান, ৬০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির আশায় সার্বিয়ায় যান বাদল। শাহিন নামের এক দালাল নুরজাহান রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তাকে সার্বিয়ায় পাঠান। সেখানে গিয়ে ওই এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ পাচ্ছিলেন না বাদল। পরে শাহিনের কথামতো আরও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং হৃদরোগে আক্তান্ত হয়ে বাংলাদেশ সময় (৭ মার্চ) রাতে পথেই মারা যান। তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় বাদলের লাশ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাদলের লাশ দেশে আনতে প্রায় ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে দূতাবাস।

দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায় কিনা কিংবা বাদলসহ ১৪ জন কীভাবে পেলো জানতে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শহিদুল আলমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বহির্গমন শাখার পরিচালককে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।