গণহত্যা নিয়ে ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন

গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের পথচলা: গণহত্যা, জাতিরাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন হয়েছে। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন।

গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক মানস ঘোষ।

বিনায়ক সেন তার প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় শোষণহীন সমাজ গঠনের যে দার্শনিক প্রস্তাবনা ছিল তা নিয়ে আলোচনা করেন। বিনায়ক সেন বলেন, অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়তে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুকে। গণতন্ত্র, সমাজতত্ত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এসব নিয়ে লড়াই তো ছিলই, সঙ্গে ছিল উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে বাড়তি লড়াইয়ের চাপ।

23c696ecfe1b7fe5971ae578dbd9304e.0

প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রমে ৩৪টি জেলায় ১৭,২৮৬টি গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্র শনাক্ত হয়েছে। প্রতিটি গণহত্যায় যদি কম করে একশ জনকেও হত্যা করা হয়, তবে ৬৪টি জেলায় জরিপ শেষে সংখ্যাটি ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক যে বিতর্ক রয়েছে, সেটার অবসান ঘটবে।

তিনি আরও বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এ বঙ্গভূমিকে কোনোকালে কোনও বাঙালি শাসন করতে পারেনি। তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীরা এদেশের স্বাধিকারের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন, নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তারা কেউ স্বাধীনতা এনে দিতে পারেননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বাঙালি যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা জাদুঘর কেবল নির্দশন প্রদর্শনের কাজই করছে না, মাঠ পর্যায়ে যে গবেষণা চালাচ্ছে— তাতে বদলে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার গতিপথ।

1ee62832526561a10679f33424ae6d59.0

তিনি বলেন, ৩২টি জেলায় গণহত্যা বধ্যভূমি গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা যদি ১৬,৪৫৮ হয়, তবে সবগুলো জেলার কাজ শেষে এ সংখ্যা কততে দাঁড়াতে পারে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। তিনি এ সময় বিশ্বব্যাপী গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের শিল্পীদের আঁকা ৬টি চিত্রকর্ম গণহত্যা জাদুঘরকে উপহার হিসেবে দেন লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

মোট চারটি একাডেমিক অধিবেশনে এ আন্তর্জাতিক সেমিনারে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ২৫ জন বিশেষজ্ঞ গবেষক অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ, গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন তারা। প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এবং চতুর্থ অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পরীকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ১ এপ্রিল অনুষ্ঠানটির সমাপনী অধিবেশন হবে।