যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ

নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ

ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর অধীনে নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নত সমরাস্ত্র কিনতে আগ্রহী বাংলাদেশ। মোটা দাগে দেখলে সবচেয়ে ভালো সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দাম বেশি এবং ওই দেশ থেকে কিনলে জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তি সই করতে হবে এবং অনেক শর্ত মেনে কিনতে হবে। আবার সুলভে উন্নত মানের সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। কিন্তু ওইদেশ থেকে কিনলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশংকা থেকে যায়। এ ধরনের একটি উভয় সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিরাপত্তা সংলাপ হচ্ছে।

আগামী বুধবার (৬ এপ্রিল) দিনভর ওই সংলাপে মোট চারটি বড় সেশনে অনেকগুলো সাব-টপিক নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা। এছাড়া আরও তিনটি সেশন হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ দমন ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং শান্তিরক্ষা।

দিনব্যাপী ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পক্ষে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস। এর আগে, দুই দেশের মধ্যে সাত বার নিরাপত্তা সংলাপ হলেও এবারেই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে এই সংলাপ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে হচ্ছে।

রবিবার (৩ এপ্রিল) নিরাপত্তা সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিব ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা ত্যাগের আগে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘৬ এপ্রিল নিরাপত্তা সংলাপ অষ্টমবারের মতো হতে যাচ্ছে। এর আগের বৈঠকটি ঢাকায় হয়েছিল। তবে আগের বৈঠক মহাপরিচালক পর্যায়ে হতো কিন্তু এবারে মার্কিন পক্ষ থেকে বিশেষ অনুরোধ ছিল পররাষ্ট্র সচিব এবং আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার যেন এবারের সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এটি ভালো লক্ষণ।’

কী থাকছে নিরাপত্তা সংলাপে

নিরাপত্তা সংলাপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশন হচ্ছে—বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা। এর অধীনে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট (ক্যাটসা), ফোর্সেস গোল-২০৩০, মেরিটাইম নিরাপত্তা, জিসোমিয়াসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা, কোভিড সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, উগ্রবাদ মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হবে।’

বিভিন্ন ধরনের মহড়া, প্রশিক্ষণ কিভাবে বাড়ানো যায়, কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা এবং এর সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোও আলোচনার মধ্যে থাকবে বলে তিনি জানান।

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা সফরের সময়ে জিসোমিয়ার নতুন খসড়া হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড যে খসড়া দিয়ে গেছেন সেটি বাংলাদেশের সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করছে। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। আমরা তৃতীয় ধাপে আছি এবং এরপরে চতুর্থ ধাপ আছে। একটি একটি করে ধাপ আমরা পার হচ্ছি।

তিনি বলেন, সুতরাং তারা যে খসড়াটি দিয়ে গেছে সেটির ওপর কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি প্রতিনিধিদল আসবে এবং তাদের সঙ্গে আমাদের আইন-কানুন এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্য বিষয়গুলোসহ নতুন কিছু সমন্বয় করার প্রয়োজন আছে কিনা দেখবে। এগুলোতে আরও সময় লাগবে।

ক্যাটসা

কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট (ক্যাটসা) হচ্ছে মার্কিন আইন যার অধীনে ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের লেনদেন বিশেষ করে সামরিক লেনদেন করলে যুক্তরাষ্ট্র ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

এর ফলে রাশিয়া থেকে উন্নতমানের মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট সুকোই প্লেন বা অন্যান্য সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমার রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নতমানের অস্ত্র ক্রয় করছে।

চ্যালেঞ্জ

দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতৈক্য থাকলেও কিছু বিষয়ে মতানৈক্য আছে—যা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, ‘র‍্যাব এবং এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আরও কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা সময়ে সময়ে দেখি। সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হলে র‍্যাবের প্রসঙ্গটি আসবে। এখানে আমাদের বলতে হবে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের কোনও সহায়তা করছে না।’

ইউক্রেন বিষয়টি নিয়ে মার্কিন একটি প্রচেষ্টা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে নীতিগত অবস্থান সেটির ওপর ভিত্তি করে আমরা কথা বলবো। বর্তমান মেরুকরণের বিশ্বে আমাদেরকে পথ বের করতে হবে যেখানে আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে পারি।

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে তাদের উদ্বেগ হয়তো আছে। আমরা শুনবো তাদের কথা এবং তাদের যদি বিশেষ কোনও অনুরোধ থাকে তবে ফেরত আসার পরে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। এটি একটি চলমান আলোচনা বলে তিনি জানান।