বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও, কাল ব্যাখ্যা দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী

ঈদ চলে গেছে। দামও বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত তেলে লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা তেলে লিটারে ৪৪ টাকা দাম বাড়ানোর পরেও ব্যবসায়ীরা বাজারে তেল সরবরাহ করছে না। একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কবে নাগাদ বাজারে সয়াবিন এবং পামতেল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে—তা কেউই জানেন না। বলতেও চাচ্ছেন না। অপরদিকে বাজারে ভোজ্যতেলের এই সংকট সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার (৯ মে) সকাল ১১টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।  মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ঈদের অনেক আগে থেকেই রাজধানীর বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগের দিন বাজারে ভোজ্যতেল না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। ওই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এক ভিডিও বার্তায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মজুত করা সব সয়াবিন তেল ঈদের আগে বিক্রির জন্য সরবরাহের ‌আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই আহ্বানে কোনও কাজ হয়নি। কারণ, ব্যবসায়ীরা জানতেন ঈদের পরপরই দাম বাড়ানো হবে। তাই ব্যবসায়ীরা মজুত করা সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়েনি।

ঈদের পরের দিন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেল, বিশেষ করে সয়াবিন এবং পাম তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা গত শনিবার থেকে কার্যকরও করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে সৃষ্টি হওয়া সেই সংকট এখনও কাটেনি। বাজার থেকে ভোজ্যতেল এক প্রকার উধাও। 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে এখন আর সয়াবিন তেলের সারি সারি বোতল দেখা যায় না। জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ দিচ্ছে না। তাই তেল নেই।

তবে দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দাবি—সয়াবিন তেল সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই। খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুত করায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনও চলমান।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলোর গাড়ি এখন আর বোতলজাত তেল সরবরাহ দিচ্ছে না। পাইকারি বাজারে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না সয়াবিন বা পামতেল। ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা এক প্রকার অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার (২ মে) ব্যবসায়ীদের নেতা হেলাল উদ্দিন ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমার সুপ্রিয় খুচরা দোকানদার ভাইয়েরা, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে, আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করছি, আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি, আপনাদের যার কাছে যতটুকু ভোজ্যতেল আছে তা বিক্রি করেন। এটা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। রোজার মাসে কোনও ভোক্তা যেন কষ্ট না পায়। এতে যদি কিছুটা লস হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা আগামীতে পুষিয়ে দেবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।”

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা আবারও জানিয়েছেন,  আমরা যদি তেল আনতে না পারি, তাহলে কীভাবে বাজারে দেবো ? বিশ্ববাজারে তেল নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। ‘আমরা তো মজুতও করতে পারছি না। গুদামে ১০ ড্রাম তেল পেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তেল যারা আমদানি করেন, উৎপাদন করেন, তারা যদি না দেন আমরা কীভাবে পাবো।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, বাজারে সয়াবিন তেলের কোনও ঘাটতি নাই। মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সঠিকভাবে তেল সরবরাহ দিচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতাদের দোকানের সামনে সয়াবিন তেল নেই ঠিকই, তবে দোকানের পেছনে ঠিকই মজুত করছে তারা।