দাবি বাণিজ্যমন্ত্রীর

ভারত-পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভোজ্যতেলের দাম কম বাংলাদেশে

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য পরিস্থিতি প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল একটি আমদানিনির্ভর পণ্য। দেশের মোট চাহিদার ৯০ ভাগ ভোজ্যতেল আমদানি করে মেটাতে হয়। মাত্র ১০ ভাগ স্থানীয় উৎপাদন থেকে মেটানো সম্ভব।

সোমবার (৯ মে) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এর আগে ভোজ্যতেল আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও বৈঠক করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৯৮ টাকা। একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ২২৪ টাকা ৬৫ পয়সা। পাকিস্তানে প্রায় ২৩৮ টাকা ৬৯ পয়সা এবং নেপালে প্রায় ২১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। বর্তমানে যে তেল বাংলাদেশে ১৯৮ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে তা আমদানিকারকরা ১ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার দরে আমদানি করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৯৮৩ মার্কিন ডলার দরে বিক্রি হচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে দর নির্ধারণের সময় যেসব নিয়ম এবং সূচক বিবেচনায় নিতে হয় তা শতভাগ অনুসরণ করেই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে সেই তেল যেদিন বন্দর থেকে খালাস হয়েছে সেই সময়ে এলসি রেট কত ছিল তা দেখেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে কারচুপির কোনও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি, যাতে ক্রয়মূল্য, পরিবহন ব্যয়, শুল্কসহ সব ব্যয় ধরে যৌক্তিক পর্যায়ে ভোজ্যতেলের মূল্য নিশ্চিত করা যায়। ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিলগেট থেকে শুরু করে পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অনিয়ম ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ না করে মজুত করার চেষ্টা করেছে। অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আজ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। আগামীতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পরেছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে ভোজ্যতেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে এবং বাজারে কোনও ঘাটতি না হয়, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ভোজ্যতেলের মূল্য আমাদের দেশের তুলনায় বেশি বেড়েছে।

টিপু মুনশি বলেন, টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্যতেল সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী জুন থেকে আবারও এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি ভোজ্যতেল সরবরাহ করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিলারদের নামে ভোজ্যতেলের সাপ্লাই অর্ডারের (এসও) মাধ্যমে তেল উত্তোলনের সময় কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। যাতে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। রিফাইনারিগুলো থেকে প্রতিদিনের তেল সরবরাহের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা নেওয়া হচ্ছে। 

এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) আফজাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার.জেনারেল আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।