রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আঞ্চলিক দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তবে ওই সমস্যার মূল সমাধান প্রত্যাবাসনে জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকায় বুধবার (২৫ মে) বিকালে পাঁচ দিনের সফর শেষ করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

চলমান বিভিন্ন ইস্যু যেমন ইউক্রেন ও আফগানিস্তান সমস্যার কারণে ‌রোহিঙ্গাদের তহবিল সংকট হতে পারে সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই ‌রোহিঙ্গাদের বোঝা বাংলাদেশ‌‌ পাঁচ বছর ধরে ‌বহন করছে। তাই এই সহযোগিতা অবশ্যই কমানো যাবে না।

রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ‌দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ‌আমরা জেআরপির মাধ্যমে ‌তহবিল সংগ্রহ করি। যেখানে ‌দাতা দেশগুলো অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত জেআরপিতে ৭৫ শতাংশ তহবিল যোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন ইউক্রেন, আফগানিস্তানসহ অনেক সমস্যা সামনে চলে এসেছে। এজন্য ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের তহবিল কমে যায় কিনা তা নিয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘ কি ভূমিকা রাখছে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। ওইদেশের আগের সরকারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের ‌যে চুক্তি হয়েছিল সেটি মিয়ানমারের সামরিক সরকার ‌কয়েক মাস আগে নবায়ন করেছে। এর ফলে রাখাইনে আমরা প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে ‌পারব। তবে রাখাইনসহ সমগ্র মিয়ানমারে কাজ করতে হলে আমাদের অনুমতির প্রয়োজন।

প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয়ভাবে যোগাযোগ রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিৎ। মিয়ানমারের ওপর তাদের যে প্রভাব আছে সেটি ব্যবহার করা সম্ভব।

রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায় জানিয়ে ফিলিপ্পো বলেন, তারা পূর্ণ নিরাপত্তা, অবাধে চলাফেরা, জীবিকার পাশাপাশি নাগরিক অধিকার পাওয়ার সুস্পষ্ট পথনকশা নিশ্চিত ‌হওয়ার ভিত্তিতে ফিরতে চান। তবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই তাদের নিজভূমিতে ফেরার জন্য অনুকূল নয়।

তার মতে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ও ‌সামরিক অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা সংকটকে জটিল করে তুলেছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জানি। প্রায় নয়শ' থেকে হাজার খানেক রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। সেখানে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ‌আছে। মালয়েশিয়ায় দুই লাখ রোহিঙ্গা আছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে বেশ কিছু রোহিঙ্গা আছে। তবে ‌বাংলাদেশে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ‌রয়েছে, এই সংখ্যাগুলো সে তুলনায় কিছুই নয়। বাংলাদেশের ওপর যাতে বাড়তি চাপ দেওয়া না হয়। এ অঞ্চলের দেশগুলো‌ যেন রোহিঙ্গাদের ‌বাংলাদেশে দেখভাল করে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি আসিয়ানের দেশগুলো যেন প্রত্যাবাসনে ভূমিকা পালন করে আহ্বান জানান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।