বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পণ্য ও সেবার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই: শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, পণ্যের মান ও গ্রহণযোগ্যতাই ভোক্তাদের মনে আস্থা তৈরি করে, যার মাধ্যমে বিকশিত হয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ। এ অবস্থায় পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভে অ্যাক্রেডিটেশনের কোনও বিকল্প নেই।

রবিবার (১২ জুন) বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত “অ্যাক্রেডিটেশন: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা” বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এই সেমিনার ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এমপি, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএবি’র মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম। 

সেমিনারে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন দেশীয় ল্যাবরেটরিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজনের মাধ্যমে পণ্যের সনদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন। স্থানীয় পণ্য ও সেবা রফতানি সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক সনদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে দেশীয় সংস্থার সমন্বয় খুবই জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন এবং এলক্ষ্যে সরকার একটি কার্যকরী অ্যাক্রেডিটেশন অবকাঠামো ইকো-সিস্টেম নির্মাণে বদ্ধ পরিকর। তিনি আরও বলেন, সরকার একটি মান নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, সনদ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মান ও অবকাঠামো উন্নয়নের  মাধ্যমে রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকরী ভূমিকা রাখা যাবে এবং এলক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি স্থানীয় সনদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন। মন্ত্রী জানান, এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অ্যাক্রেডিটেশনের ভূমিকা অপরিসীম।   

শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক জলবায়ুতে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও প্রতীয়মান। এ অবস্থায় তিনি শিল্প উদ্যোক্তাসহ সকল স্তরের মানুষকে পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। শিল্প সচিব বলেন, রফতানির বাজার সম্প্রসারণে পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণ ও যথাযথ অবকাঠামোর কোনও বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশনকে ‘ই-পাসপোর্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সচিব উল্লেখ করেন, দেশীয় পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন নিজ দেশই সম্পন্ন করা সম্ভব হলে রফতানি সম্প্রসারণের পাশাপাশি সময় ও ব্যয় দুটো হ্রাস করা সম্ভব।   

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশীয় শিল্প পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন, ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি সম্প্রসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রায় টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও আমাদের শিল্পখাতের অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়ন তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয় না। বাংলাদেশের রফতানিমুখী পণ্য, যেমন—  চামড়া, পাট ও পাট পণ্য, প্লাস্টিক, হিমায়িত খাদ্য প্রভৃতির রফতানি আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ বাস্তবায়নে সরকার গৃহীত নীতিমালার আশু বাস্তবায়নের ওপর জোরারোপ করেন, ডিসিসিআই সভাপতি। সেই সাথে আমাদের টেস্টিং ল্যাবরেটরিগুলোর সনদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের আহ্বান জানান তিনি। 

বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি)’র মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ পণ্য ও সেবার জন্য সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি পর্যায়ে মান নিশ্চিতকরণ আবশ্যক, সেই সাথে নিরাপদ পণ্য এবং সেবা উৎপাদনের জন্য একটি কার্যকর জাতীয় মান অবকাঠামো একান্ত অপরিহার্য।   

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, নিরাপদ পণ্য, সেবা এবং মান নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো আমাদের সকলের জন্য অতীব জরুরি।

অনুষ্ঠানে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর-সাইন্স ল্যাবরেটরি)-এর চামড়া গবেষণা ইন্সটিটিউট, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইটিএস ল্যাবটেস্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ঢাকা ল্যাবরেটরি, তুরস্কভিত্তিক সংস্থা ল্যাব রাইট বাংলাদেশ লিমিটেডের ঢাকা ল্যাবরেটরি, কন্টিনেন্টাল ইন্সপেকশন কো. বিডি লিমিটেডের টেস্টিং ল্যাবরেটরি এবং এজিএস কোয়ালিটি অ্যাকশন লিমিটেড।