নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যা বললেন সিইসি

সরকার ও রাজনৈতিক দল; দুটো ভিন্ন জিনিস উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সরকার ও দল ভিন্ন জিনিস। আমরা যদি এই বিভাজনটা স্পষ্ট করতে পারি... এই মেসেজটা দিতে পারি; কেবিনেট যেটাকে বলা হয়—রাষ্ট্রপতি থেকে বা প্রধানমন্ত্রী থেকে ডেপুটি..., এটাই কিন্তু মূল সরকার। বাকি যারা আছে সেটা কিন্তু আমলাতন্ত্র।’ ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১৩ জুন) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘সরকার যেটা আছে, তারা কিন্তু শপথ নিয়েছেন—সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবো, পক্ষপাতিত্ব করবো না। উনারা বলেননি যে আমরা আমাদের দলকে আগামীতে আরও বেশি সহযোগিতা করবো, স্বভাবতই এটা উনারা বলেন না। আমার বিশ্বাস উনারা উনাদের শপথটা জানেন, অন্তত একটা সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থেই উনারা নির্বাচনকালীন সরকারে থেকে সরকারের মতোই আচরণ করবেন এবং কোনও দলের নয়, সরকারের মন্ত্রী হিসেবেই আচরণ করবেন তারা।

নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। অপজিশন থেকে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে, এগুলো নিয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যে বিভিন্ন সরকারের দাবি করা হচ্ছে, সেটা কিন্তু আমাদের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়, পলিটিক্যাল লিডাররা যদি একমত হন; তারা দেখবেন। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বর্তমানে যে আইন আছে, সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। তার সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশন বেড়ে যাবে। একজন মন্ত্রী কিন্তু দলের নয়। আমরা চাই তারা আমাদের সহযোগিতা করুক।

তবে নির্বাচনকালে সরকারের ধরন পাল্টে যাবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘তখন এই সরকার কোনও পলিসি নিয়ে কাজ করবে না। পৃথিবীর সব দেশেই এটা আছে। নির্বাচনের কাজে আমাদের সহায়তা করতে হবে।
 
দেশে বিদ্যমান যে আইন আছে, তাতেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে বাধ্য বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘সফল নির্বাচনে আমরা সরকারের কাছে সহায়তাগুলো চাইবো এবং অবশ্যই সরকার তা করবে বলে আশা করি। সহায়তা মূলত স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক, অন্য কোনও মন্ত্রণালয় নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনও দরকার নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেহেতু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে, পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর সশস্ত্র বাহিনীকে যদি সম্পৃক্ত করা হয়, তাহলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লাগবে।’

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন না, রাজনীতির বাইরে একটা অবস্থান আছে... (দলগুলো) প্রতিদিন যে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছে, সেখান থেকে সরিয়ে এনে যদি টেবিলে মুখোমুখি করা যায়, তাহলে আলোচনা হবে গঠনমূলক। টেবিলের বাইরে গিয়ে যদি ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য পরস্পর-পরস্পরের বিরুদ্ধে দেয়, তাহলে কিন্তু দূরত্ব কমবে না। কারণ, আমরা চাইছি নির্বাচনে সব দল অংশ নিক।’

নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার তাগিদ দিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন যদি সহিংসতার কারণে বিঘ্নিত হয়ে যায়, আমাদের ক্ষমতা আছে, যেকোনও একটি সেন্টার বা নির্বাচনটা বাতিল করে দেবো। আমরা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবো। বিরূপ পরিবেশ যাতে না হয়, আমরা চাইবো নির্বাচনে যাতে ভোটাররা যেতে পারে এবং নির্বিঘ্নে যেন ভোট দিতে পারে, সেই খবরটা আমরা রাখবো। আর প্রচণ্ড রকম সহিংসতা যদি হয়ে যায়, তাহলে আমরা ক্ষমতা যেটা রয়েছে, দায়িত্ব রয়েছে, আমি বলবো সেই সেন্টার বা কনস্টিটোয়েন্সি (আসন) বাতিল করে দিতে পারবো।’
 
নির্বাচনে খরচের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনে যে নমিনেশন নিয়ে কত খরচ হয়, যার ফলে একটা মনস্তাত্ত্বিক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যে জয়ী আমাকে হতেই হবে। যে পয়সা আমি খরচ করেছি, তা তুলে আনতেই হবে। এর ফলে কিন্তু একটা সহিংস চরিত্র গড়ে ওঠে। এই জায়গা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে জানি না। তবে দলগুলোর নেতৃত্ব উপলিব্ধ করা উচিত যে নির্বাচনটা যেন বাণিজ্য না হয়। মানে আমি বাণিজ্যের জন্য এমপি হতে হবে। নমিনেশনটা এনে যে করেই হোকে নির্বাচনে জিততে হবে, এই মানসিকতা থেকে যদি উনাদের সরিয়ে আনা যায়, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র, নির্বাচনি ব্যবস্থাটা বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নত অবস্থায় পৌঁছতে পারবে।